কর্মে ও ব্যবসায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। কৃষিপন্ন বিক্রেতা ও ডাক্তারদের অর্থকড়ি প্রাপ্তি হবে সর্বাধিক। বন্ধুকে টাকা ... বিশদ
মোমো ইতিহাস সূত্রে চৈনিক খাবার। চিনা নাম জিয়াওজি। স্টার্টার হিসেবে ‘ডিমসাম’ বা এক কামড়ে কপ করে খেয়ে ফেলার জন্যই এর প্রসিদ্ধি। মোমো শব্দটা চিন থেকে ধার নিয়েছে নেপালিরা। এখন সারা বিশ্বে তিব্বতি ও নেপালি ডেলিকেসি হিসেবেই এর খ্যাতি।
সন্ধেবেলায় অফিস বা কাজ থেকে ফেরার পর একটু নোনতা জাতীয় মুখরোচক হলেই বাঙালি তথা অবাঙালিদের মন রসনাতৃপ্তিতে ভরে ওঠে। কলকাতায় শিঙাড়া-চপ অথবা কচুরির জায়গাটা থাকলেও বর্তমানে এই খাবারগুলিকে ধীরে ধীরে পিছনে ফেলে একটি ‘স্ট্রিট ফুড’ মোমো।
ইতিহাস বলে, মোমো-র জন্ম তিব্বতে। জানা যায়, তুলাধর জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম ‘মোমো’ জন্ম নিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেহেতু তিব্বতে চমরি গাই সহজেই মেলে তাই মোমো তৈরিতে ‘পুর’ হিসেবে চমরি গাই-এর মাংসকে ব্যবহার করত তারা। তিব্বতি ভাষায় ‘মো’ (Mo) শব্দের অর্থ ‘বাষ্প বা স্টিম’। আর ‘মোমো’ কথাটির অর্থ হল ‘মাংসে ভরা ভাপা ময়দার পুডিং বিশেষ একটি খাদ্য’। ‘মোমো’ আসলে বাঙালির অতি পরিচিত পুলিপিঠা সদৃশ একধরনের খাবার যেটি ময়দার আস্তরণে তৈরি মাংসের পুরে ভরা একটি খাদ্য, ইংরেজিতে যাকে ‘ডাম্পলিং’ বলে।
নেপালে পৌঁছে মোমোর পুর হিসেবে জায়গা করে নিল মহিষের মাংস। তাঁরা ‘মোমো-র পুর মহিষের মাংসের কিমা ব্যবহার করতে শুরু করে। নেপালের ব্রাহ্মণ ও ছেত্রী সম্প্রদায়ের কাছে পুরোপুরি নিষিদ্ধ মোমো। তবে নেপালের অধিকাংশ স্থানেই সুস্বাদু খাবার হিসেবে পরিচিত এই খাবার।
পরবর্তী সময়ে নেওয়ার ব্যবসায়ীরা মোমো তৈরির পদ্ধতিটিকে একটু নতুনত্ব রূপ দিয়ে রোজকার খাদ্যতালিকার জায়গা দেন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি জন আন্দোলনের ফলে নেপালে বেশিরভাগ মানুষের কাছে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে মোমো।
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে ব্যাপক দেশান্তর ও মুক্ত অর্থনীতির কল্যাণে ২০০০ সালের মাঝামাঝি কলকাতা তথা ভারতে বিভিন্ন স্থানে ‘মোমো’ পরিচিতি লাভ করে। ভারত তথা কলকাতায় মুরগির মাংসের কিমা দিয়ে মোমো আট থেকে আশির মাস্ট-ফাস্ট ফুড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণত মোমো দুই প্রকারের, একটি ভাপা এবং অপরটি ভাজা। সুপ এবং সসে ডুবিয়ে মোমো পরিবেশন করা হয়। কোথাও বা আবার দেওয়া হয় টমেটোর টক ঝাল চাটনি। তবে পশ্চিমবঙ্গে মোমো পরিবেশন করা হয় সুপ এবং চাটনি দিয়ে।
আজকাল মোমোর পুর হিসেবে কুচানো বাঁধাকপি বা পেঁয়াজ কিংবা বিভিন্ন সব্জি দিয়ে ভেজ মোমোও প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও ‘পনির মোমো’, ‘চকোলেট মোমো’, ‘স্যুপ মোমো’ ‘সুইট অ্যান্ড সাওয়ার মোমো’-সহ বিভিন্ন স্বাদের সুস্বাদু মোমো বর্তমানে স্ট্রিট ফুডের বহুলাংশ জুড়ে আছে। দিল্লির লাজপত নগরে ১৯৯৪ সালে প্রথম মোমোর দোকান চালু করেন দলমা সেরিং। তিনি সম্ভবত ভারতের প্রথম মোমো বিক্রেতা। ‘দলমা আন্টি মোমো-স’ নামক দোকানটিতে প্রায় প্রতিদিন দশ হাজারেরও বেশি মোমো বিক্রি হয় বলে জানা যায়।
এই মোমো অনেকটা কোরিয়া দেশের মান্ডু, জাপানের গিয়োজার, মঙ্গোলিয়ার বাজ, চীনে জিয়াওজি (বা বাওজি)-র মতন। তিব্বতে এই মোমো-কে ‘মগমগ’ বলে। এছাড়াও, নেপালে এটিকে মমচা, আসামে মম ও চীনে ‘পিনইন’ নামে ডাকা হয়। যাই হোক, কলকাতায় নানা স্বাদের ফাস্টফুড যতই নজরকাড়া হোক না কেন, সবার উপরে রয়েছে এই ‘মোমো’।