সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
কাল গৌরী-গৌতমের সঙ্গে দেখা হবে। তখন আপনার আশীর্বাণীর পুনরুক্তি করব—ইতিমধ্যে সুধাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছি। জয়ন্তী ভালই আছে। আমি এবার আশ্চর্যরকম ভাল আছি—২৫ বছর পরে ভোরবেলায় ঠাণ্ডাজলে স্নান করে যেন ‘পুনর্জীবলোকং প্রবিষ্টোহস্মি’। এইটি এবার কেদারনাথের প্রসাদ। নেমে এসে হৃষীকেশ থেকে শুরু করেছিলাম—এখন পর্যন্ত বেশ চলে যাচ্ছে দেখছি। কেন যেন মনে হয়, শাদ্ধ বেশী দূর গড়াবে না এবার। এত ভাল ধান হয়েছে, লোকের মনে এত সুখ—ওদের তাতানো Wolf-দের পক্ষে সহজ হবে না। Second phase of agitationটা খুব ওৎরায়নি। Third Phase-এই ওটা মিইয়ে পড়বে। তা ছাড়া সত্যকার গণদেবতা এবার জাগবেন। বুকের মধ্যে যেন তাঁর চরণের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। ঝড়টাই বিপ্লবের একমাত্র নিশানা নয়—সূর্যোদয়ে আলোর নিঃশব্দ উদ্ভাসও একটা বিপ্লব এবং আমার মনে হয় সত্যকার বিপ্লব। ঠাকুর বলতেন, ‘কি আর বলব, তোদের চৈতন্য হ’ক’। তাঁর সেই কথাই কানে এবং প্রাণে বাজছে। চৈতন্য হলেই এই পলিটিক্যাল বুকচাপার গোঙানি থেমে যাবে। এমনি করে তাঁর যে শাশ্বত ইচ্ছা: ‘Let there be light’: আমাদের ভাবনাকে যদি তার সঙ্গে যুক্ত করতে পারি, তাহলে সত্যি ভাববার কিছু নাই। জীবনে স্বপ্নভঙ্গের আঘাত অনেক সইতে হয়েছে—কিন্তু অন্তর্যামী কিছুতেই হায় হায় করতে দেননি। বার বার শুনেছি, ‘ভাবছিস্ কেন, আমি আছি’।
তাই তো, ভাবি কেন? বস্তুর গতি যেমন মন্থর, ভাবের গতি তেমনি বিদ্যুতের মত ক্ষিপ্র। ‘ময়ৈব নিহতাঃ’—তাঁর এই কথাই কি সত্য? ‘ময়ৈব উজ্জীবিতাঃ” তাঁর একথাও কি সত্য নয়? স্বপ্ন ভাঙলেও আমি স্বপ্নকেই বাস্তবের চাইতে বড় স্থান দিয়ে এসেছি। স্বপ্ন সেই দেখতে পারে, যে তাঁর প্রসাদ পেয়েছে। ঠাকুর বলতেন, বড় ফুল ফুটতে দেরি হয়। যতদিন না ফোটে, ততদিন সে স্বপ্ন, এবং তাঁর অন্তরে চিন্ময় বলেই আমার অন্তরে সত্য। আমার ভগবান হিরণ্যগর্ভের স্বপ্ন। আমার ভগবান্ দুর্মর আশা।
ছেলেবেলায় বৈষ্ণব বাউলের মুখে শুনেছিলাম—‘ভাব কৃষ্ণ, প্রাণ রাধা।’ কথাটা বড় ভাল লেগেছিল। আজ বৃহদারণ্যকে দেখছিলাম, যাজ্ঞবল্ক্য বলছেন, ‘প্রাণ হল প্রিয়তা, মন হল আনন্দ, আর হৃদয় হল স্থিতি। সবই ব্রহ্ম’। সন্ধ্যায় মালঞ্চের শিশুদের পরিচর্যার পর কবোষ্ণ বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলি ভাবছিলাম। মনে হল, ঠিক ঐ কথাগুলিরই প্রতিধ্বনি বাউলের কণ্ঠে। প্রিয়তা প্রকৃতির ধর্ম, তাই প্রাণ; আর আনন্দ পুরুষের ধর্ম, তাই মন (অবশ্য বৈদিক অর্থে, যাকে যাজ্ঞবল্ক্যই আরেক জায়গায় বলেছেন ‘মনোজ্যোতিঃ’)। নারীর প্রেম, পুরুষের আনন্দ—দুয়ের স্থিতি হৃদয়ে। যাজ্ঞবল্ক্যের মত এমন হৃদয়বান্ আচার্য উপনিষদে আর দুটি দেখা যায় না। আকাশ-ভাবনা পরে অভ্যাস করলেও আকাশ আপনাকেও শিশুবয়সেই পেয়ে বসেছিল। আনন্দময়ীর কথা মনে পড়ছে। অভয়ের লেখা জীবনীতে ছোট্ট একটি কথা পেয়েছিলাম। আট বছরের মেয়ে বাবার কাছ ঘেঁষে জিজ্ঞাসা করল, ‘বাবা, ভগবান খুব বড়, না’? বাবা বললেন, ‘হাঁ’।
অনির্বাণের ‘পত্রং পুষ্পম্’ থেকে