সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
গুরু কেবল আমাদের বর্তমান অবস্থা দেখেন না, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাও তাঁর জ্ঞাত। বহু বছর পূর্বে একজন তরুণ সন্ন্যাসী ভারত থেকে আমেরিকায় প্রচারে যাত্রার প্রাক্কালে স্বামী তুরীয়ানন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। যখন শ্রীরামকৃষ্ণের এই মহান শিষ্য ঐ তরুণ সাধুকে উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন, তখন তিনি প্রতিবাদ করে বললেন: ‘‘মহারাজ, আপনি যে আমার গুণের এত প্রশংসা করেছেন, আমার তো তা নেই।’’
স্বামী তুরীয়ানন্দ বলেন: ‘‘তুমি নিজের সম্বন্ধে কতটুকু জান? আমি দেখছি তোমার ভবিষ্যতের বিকাশ।’’ সুপ্ত দেবত্বকে জাগাবার শক্তি আমাদের আছে; গুরু কেবল আমাদের ক্ষমতাটির প্রতি বিশ্বাস এনে দেন। আমাদের সর্বদা স্মরণ করতে হবে সেই দৈব সম্পদ ‘‘অহংকারশূন্য ব্যক্তিরাই ধন্য...।’ নিরভিমানতা ও আত্মবিশ্বাস যুগপৎ থাকা চাই। খ্রীষ্ট যে বিশ্বাস তার শিষ্যদের মধ্যে সঞ্চার করেন ‘তোমরা ধরিত্রীর সার’ এই কথা বলে, সে বিশ্বাসের সঙ্গে অহংকারের সম্বন্ধ নেই; তা হচ্ছে পরমাত্মা বা অন্তরস্থিত ভগবানে বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের ফলে আসে শরণাগতি এবং অহমিকা থেকে মুক্তি। শ্রীরামকৃষ্ণ এ বিষয়ে হিন্দুদের পুরাণ থেকে একটা ঘটনা বলেছেন। রাধা ছিলেন গোপীদের মধ্যে প্রধান এবং শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে অধিক ভালবাসতেন। সৌজন্য আপাতদৃষ্টিতে তাঁকে অহংকারী মনে হত। অন্যান্য গোপীরা তাই রাধার গর্বের কথা শ্রীকৃষ্ণকে জানালে তাদের তিনি কৌশলে রাধাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে বলেন। গোপীদের প্রশ্নের উত্তরে রাধা বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আমার অহংকার আছে। কিন্তু সে অহংকার? আমার নয়; আমার যা কিছু সব শ্রীকৃষ্ণের।’’ যে ব্যক্তি ভগবানে আত্মসমর্পন করেছেন, সাধারণভাবে তাঁর কোন অহংকার নেই। তিনি গর্বিত বা দাম্ভিক হতে পারেন না। নিজ অন্তরস্থ আত্মাতে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস; সেই আত্মা ও ভগবান একই বস্তু।
‘‘তোমরা ধরিত্রীর সার’’— যীশুর এই বাণী আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় স্বামী ব্রহ্মানন্দের একটা উপদেশ: ভগবানের কৃপা তোমরা পেয়েছ, গুরুর কৃপাও পেয়েছ, এবং ভক্তদের কৃপাও পেয়েছ।