আপনার মনে ধর্মভাব জাগ্রত হবে। কর্মপ্রার্থীরা কর্মের সুযোগ পাবেন। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা হবে। অর্থ নিয়ে ... বিশদ
ভগবানের সঙ্গে একাত্মনুভূতিলাভের ফলেই আমরা তাঁর যথার্থ সন্তান এবং শান্তিসংস্থাপক হই। অবশ্য একথা সত্য যে আমরা সর্বদাই তাঁর সন্তান—এমন কি অজ্ঞান অবস্থাতেও। অজ্ঞান অবস্থায় আমাদের ‘কাঁচা আমি’ আত্মপ্রতিষ্ঠা করে, ফলে হয় ভগবদ্বিস্মরণ। ঈশ্বর ও সর্বভূতের সঙ্গে একাত্মনুভূতিলাভের পূর্ব পর্যন্ত আমরা কখনই শান্তির অধিকারী হই না। সমাধিকালে জ্ঞানীর অহংকার ঈশ্বরে বিলীন হয়। যখন তিনি নিম্নভূমিতে নামেন তখন আবার তাঁর ব্যক্তিত্বের স্মরণ হয়; কিন্তু তাঁর সে ‘আমি’, অহংকার, ‘পাকা’—যা তাঁর বা অপরের বন্ধনের কারণ হয় না। হিন্দুশাস্ত্রে এই ‘পাকা আমি’-র দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে ‘দগ্ধ রজ্জুর’ সঙ্গে; যদিও সেটা দেখতে দড়ির মতো, কিন্তু তা দিয়ে বাঁধা চলে না। এই ‘পাকা আমি’ ছাড়া ঈশ্বরজানিত পুরুষের শরীরধারণ এবং লোকশিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।
আমি যখন তরুণ সন্ন্যাসী ছিলাম, তখন শ্রীরামকৃষ্ণের একজন শিষ্য আমাকে বলেছিলেন: “কখনও কখনও অপরকে উপদেশ দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমি যেদিকেই তাকাই সেদিকেই বিভিন্ন মুখোশপরা এবং নানারূপে ক্রীড়ারত ভগবানকেই দেখি। তখন কে-ই বা গুরু? আর কে-ই বা শিষ্য? যখন আমার মন সেই উঁচু ভূমি থেকে নেমে আসে, তখন আমি তোমাদের দোষ ও দুর্বলতা দেখি এবং সেগুলি সরাতে চেষ্টা করি।” শ্রীমদ্ভাগবতে একটা সুন্দর শ্লোক আছে: “যাঁর হৃদয়ে ভগবান আবির্ভূত হন, তিনি যেখানেই যান সেস্থানে শান্তি ও আনন্দে ভরে যায়।” এঁরাই প্রকৃত শান্তিসংস্থাপক। খ্রীস্ট তাঁর দিব্যগুণাবলীতে এদের কথাই বলেছেন। আমি স্বামী ব্রহ্মানন্দের জীবনে এটি লক্ষ্য করেছি। যে-কেউ তাঁর সামনে আসত, তার মন আধ্যাত্মিক আনন্দে ভরে যেত, তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই একটা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হত। আমাদের একটা মঠে সদ্য স্কুল ছেড়ে আসা নবাগত কয়েকটি তরুণ সাধু ছিল। তারা তখনও মঠের শিক্ষা পায়নি। অল্প কিছুকাল পরে তারা পুরানো সংস্কারবশে নিজেদের মধ্যে ষড়যন্ত্র ও ঝগড়া শুরু করে। আমাদের সংঘের একজন প্রবীণ সন্ন্যাসী ব্যাপারটি তদারক করতে যান। তিনি সকলকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন কে কে দোষী। তিনি তখন সংঘাধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দকে পত্রে জানান যে এ ছেলেরা সাধুজীবনে অনুপযুক্ত এবং তাদের মঠ থেকে বের করে দেওয়া উচিত। স্বামী ব্রহ্মানন্দ উত্তরে জানান: “এ ব্যাপারে এখনই কিছু করতে হবে না; আমি শীঘ্রই আসছি।” তিনি পৌঁছে কাউকে কিছুই বললেন না। তিনি ঐ মঠে বাস করতে শুরু করলেন। তিনি শুধু একটা নিয়ম করলেন যে সবাইকে তাঁর সামনে প্রত্যহ ধ্যান করতে হবে। অনতিবিলম্বে ছেলেরা ঝগড়া ভুলে গেল। সেখানে একটা দিব্য পরিবেশ সৃষ্টি হল। দু-তিন মাস পরে যখন স্বামী ব্রহ্মানন্দ ঐ মঠ ছেড়ে চলে গেলেন তখন সেখানে পূর্ণ ঐক্য ও শান্তি বিদ্যমান।
স্বামী প্রভবানন্দের ‘বেদান্তের আলোকে খ্রীস্টের শৈলোপদেশ’ থেকে