আপনার মনে ধর্মভাব জাগ্রত হবে। কর্মপ্রার্থীরা কর্মের সুযোগ পাবেন। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা হবে। অর্থ নিয়ে ... বিশদ
প্রসাদ গ্রহণান্তে বকুলবৃক্ষতলে উপবিষ্ট ব্রাহ্মণকে বৈষ্ণব যাহা বলিলেন তাহার সারমর্ম নিম্নে লিখিতেছি।
সর্বশাস্ত্র শিরোমণি শ্রুতিতে আছে যে পরব্রহ্মের পরাশক্তি ও স্বরূপশক্তি বা অন্তরঙ্গা। চিচ্ছক্তি ব্রহ্মের ন্যায় নিত্যা ও সর্বগতা। সহচারিণী শক্তি না হইলে লীলা হয় না এবং পরব্রহ্ম একা আনন্দ পান না। এই জন্য তাঁহারই সহিত একীভূতা শক্তি লীলার্থে পৃথক অবস্থান করেন। শক্তিমানের সহিত শক্তির ভেদাভেদ সম্বন্ধ, এই ভেদাভেদ অচিন্ত্যনীয়। দৃষ্টান্ত যেমন চন্দ্র ও চন্দ্রিকা কস্তুরী ও তাহার সৌরভ। শক্তি বড় কি শক্তিমান বড় এই প্রশ্ন নিরর্থক। শক্তিমান বা অধিষ্ঠান না থাকিলে শক্তি থাকিতে পারেন না, আবার শক্তি আছেন বলিয়াই শক্তিমানের এতই মহিমা। অতএব সারকথা ‘দুনো পাল্লা ভারী’ ‘রসরাজ মহাভাব দোঁহে একরূপ।’ স্বরূপশক্তির কার্যাভেদে তিন নাম সন্ধিনী, সম্বিৎ, হ্লাদিনী। যোগমায়া শক্তি স্বরূপশক্তির এক প্রকাশ। লীলাপুষ্টির জন্য ভগবদুম্মুখ ব্যক্তিগণকে এমন কি স্বয়ং ভগবানকেও মোহিত করা যোগমায়ার কার্য। তিনি সাধকগণকে ভগবানের সহিত যুক্ত করার জন্য সর্বদাই কৃপাময়ী।
স্বরূপ শক্তির নামান্তর মহামায়া ও দুর্গা। ইহার ছায়ারূপিণী আর এক ভগবৎশক্তি আছেন যাঁহার নাম মহামায়া ও দুর্গা। ইনি আবরিকা মায়াশক্তি—ভগবদ্বিমুখ জীবগণকে মোহিত করেন এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি স্থিতিপ্রলয়কারিণী। শুদ্ধাভক্তির যাজক বৈষ্ণবগণ শারদীয়া মহাপূজায় ভগবানের স্বরূপশক্তি ও কৃষ্ণমন্ত্রের অধিষ্ঠাত্রী যোগমায়া দুর্গাদেবীর অর্চনা করেন কৃষ্ণভক্তিলাভের কামনায়। কৃষ্ণ সেবা ভিন্ন তাঁহাদের অন্য কাম্য নাই। চিৎশক্তি দুর্গার কৃপায় শ্রীগোবিন্দ সুলভ হন। কিন্তু মায়াশক্তির পূজা না করিলেও বৈষ্ণবগণ তাঁহারও নিকট অবনত ও কৃপা প্রার্থী। তাঁহারই ব্রহ্মাণ্ডে থাকিয়া তাঁহার রাজ্যের পত্রপুষ্প ফল জলাদি উপকরণের দ্বারা বৈষ্ণবগণ কৃষ্ণসেবা করার সুযোগ পাইয়া কৃতার্থ হইতেছেন। তিনি মন্ত্রাদির রক্ষায়িত্রী এবং কৃষ্ণভক্তগণকে এই সংসার হইতে সত্বর মুক্তি দিতে সাহায্য করেন।
যাঁহারা অনিত্য সুখ সম্পদাদির কামনায় পূজা করেন তাঁহারা মায়াশক্তির অবিদ্যাশক্তিকে পূজা করেন আর যাঁহারা মুক্তিকামী তাঁহারা বিদ্যাশক্তির পূজা করেন। একই মহাশক্তির মূর্তিতে কেহ ভক্তিকামনায়, কেহ মুক্তিকামনায়, কেহ ভোগ কামনার বিভিন্ন ভাব লইয়া বিভিন্ন সাধক অর্চনা করিতে থাকেন। দুর্গা পূজার আবরণ দেবতাদের পূজার মধ্যে যে, যোগিনীদের পূজা আছে সেই যোগিনীদের নাম উমা, তারা, দুর্গা ইত্যাদি। সেইরূপ স্বরূপ শক্তির নাম মহামায়া, দুর্গা ও কাত্যায়নী এবং তাঁহার ছায়ারূপা আবরিকা বহিরঙ্গা শক্তির নামও দুর্গা, মহামায়া ও কাত্যায়নী। নবদ্বীপে পোড়ামা, কালনায় অম্বিকা, পুরুষোত্তমে বিমলা, কামরূপে কামাখ্যা এবং ব্রজে কাত্যায়নী দেবীর একই শ্রীমূর্তির সম্মুখে কি শুদ্ধ বৈষ্ণব কি শাক্ত কি শৈব সকলেই প্রণতি জানান। শরৎকালে মহাপূজায় বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব সকলেই জগদম্বার অর্চনা করেন।