কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
গীতায় আছে শ্রীমুখবাণী—
“যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্”।
—যে ভক্ত যেভাবে আশ্রয় চায় তাঁহার, তিনি সেই ভক্তকে ভজনা করেন সেইভাবে। মহা মহা ভক্ত আছেন বলিয়া ভগবান্ ক্ষুদ্র ভক্তকে উপেক্ষা করিতে পারেন না। বৃন্দাবনের পরম প্রেমাস্পদগণের সঙ্গে রসাস্বাদনে মজিয়া থাকিলেও শ্রীকৃষ্ণ উপেক্ষা করিয়া ভুলিয়া থাকিতে পারেন না মথুরাধামের প্রিয় ভক্তদের। তাহা করিলে জগতে কলঙ্ক রটে তাঁহার ভক্তবৎসল এই নামে।
শ্রীবৃন্দাবনের প্রিয়জনদের প্রীতির তুলনা নাই জগতে কোথাও, একথা সত্য বটে। কিন্তু মথুরার ভক্তেরাও ছোট নহেন। শ্রীকৃষ্ণকে পুত্ররূপে পাইবেন—এইজন্য কি কঠোর সাধনাই না করিয়াছেন বসুদেব-দেবকী। বিবাহের দিন হইতে দুঃখের আরম্ভ। সুদীর্ঘকাল আছেন কারাকক্ষের দেউলাভ্যন্তরে। কৃষ্ণ ভূমিষ্ঠ হইবার পরেও অতীত হইয়াছে কত বেদনাভরা দশ বৎসর আট মাস কাল। প্রতিটি ক্ষণ কাটিতেছে এই বেদনাহত দম্পতির শুধু কৃষ্ণচিন্তায়। বংশীবট, যমুনাতট যত সুখময় স্থানই হউক না কেন— মথুরার শ্বাস-তপ্ত কারারক্ষ ভুলিতে পারেন না দেবকী নন্দন। পিতামাতা ছাড়া আরও অনেক ভক্ত আছেন মথুরায়, যাঁহারা আছেন মথুরায় অনেক কষ্ট সহ্য করিয়া, কৃষ্ণ আসিবেন এই আশায় বুক বাঁধিয়া। তাঁহাদিগের জন্য আনন্দ রসভূমি ব্রজকে চিরত্যাগ করিয়া মথুরার পথে চলিতে হইল ভক্তবৎসল শ্রীহরির। কংসকে বধ করিয়া মুক্তি দিলেন গোবিন্দ কারাক্লিষ্ট বসুদেব-দেবকীকে। রাজাসনে বসাইলেন কংসপিতা উগ্রসনকে। পিতামাতার কারামুক্তি-কার্য্যেই শেষ হইল না পুত্রের কর্ত্তব্য। তাঁহাদের সঙ্গে থাকিয়া কক্ষে বক্ষে উঠিয়া আস্বাদন করিতে হইবে তাঁহাদের অতৃপ্ত বাৎসল্য-স্নেহধারাকে। রাজকার্য্য পরিচালনা করিবার যোগ্যতা নাই বৃদ্ধ উগ্রসেনের। সমুদয় কার্য্যভার বহিতে হইবে শ্রীকৃষ্ণকেই, সুতরাং কংস বধ করিয়াই প্রত্যাবর্তন করা শোভা পায় না শ্রীকৃষ্ণের ব্রজের ধীরসমীরে। শৃঙ্খলাহীন রাজ্যের পুনর্গঠনের গুরুদায়িত্ব শ্রীকৃষ্ণের মাথায়। ভক্ত-দরদী লোকশিক্ষা-গুরু শ্রীকৃষ্ণ মথুরা ছাড়িয়া ব্রজে যাইতে পারেন না।
কংসরাজের পত্নী ছিল দুই জন—অস্তি আর প্রাপ্তি। চলিয়া গিয়াছে তাহারা পিত্রালয়ে বিধবা হইবার পর। তাহাদের পিতা হইল অত্যাচারী রাজা জরাসন্ধ। ক্ষেপিয়া উথিল জরাসন্ধ জামাতার বধধারী শ্রীকৃষ্ণের উপর। দুই ভগ্নী পিতার কাছে অবতারণা করিয়াছে বহু মিথ্যা কথা শ্রীকৃষ্ণের বিরুদ্ধে।
ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর ‘উদ্ধব-সন্দেশ’ থেকে