কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
সন্তান গর্ভে প্রবেশ করিলেই পিতামাতা তাহাকে ‘আমার’ বোধ করেন। হাত আমার, পা আমার, চোখ আমার, মুখ আমার, মন আমার, বুদ্ধি আমার, আবার সঙ্গে সঙ্গে পুত্র আমার বিত্ত আমার এই ভাবনায় পুত্রকে আত্মস্থ করি নিজেকে ছড়াইয়া দিই। ঐ সব বস্তুর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হইলে আমার ক্ষতি জ্ঞান করি। কিন্তু পুত্র যদি ব্রহ্মদেশে মরিয়া যায়-সাত মাস সেই সংবাদ না পাইলে আমার পুত্রশোক হয় না কেন? যদি পুত্র মরিলে ক্ষতি হইত তবে তার মৃত্যু হওয়া মাত্রই সে ক্ষতি বোধ হয় না কেন?
ঔষধের গুণে আমি অচৈতন্য হইলে, হাতখানা যদি কাটিয়া আলাদা করা যায় তবে আমি “ক্ষতিগ্রস্ত হইলাম” বোধ করি না ত? তবে আমিটার সঙ্গে ঐ পুত্রবিত্ত দেহমনের সম্বন্ধ কি?
যদি সত্যই সম্বন্ধ থাকিত তবে আমি কখন বোধ করি কখন বোধ করি না কেন? আমি নিজের সঙ্গে নানা বস্তু জুড়িয়া দিয়া—সেই বস্তুর শুভাশুভে সুখদুঃখ কল্পনা করি। সুখে রাজি—দুঃখে গররাজি!! মাটির সান্কি পয়সা খরচ করিয়া কিনিয়া সদাই সংকিতচিত্তে পরম যত্ন করি; তারপর একটু ঠেস লাগিয়া যখন ভাঙ্গিয়া পড়ে তখন বুকে ঘা খাই! কী যে বোকামি তা কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়?
কেন এমন হয়? ইহা একটী প্রাকৃতিক নিয়ম। এই নিয়মই সৃষ্টির মূল। আমি একাকী গঙ্গাতীরে বসিয়া ইষ্ট চিন্তা করিতেছি। চোখে পড়িল ছোট দুটী ছেলে ওপারে ছুটাছুটি করিতেছে; হঠাৎ একটী তীরের শেষপ্রান্তে এমনভাবে দাঁড়াইল যে এখনই পড়িয়া যাইবার সম্ভাবনা! আমি ভয়ে চীৎকার করিয়া উঠিলাম। ইহা কি আশ্চর্য্য ব্যাপার নহে?
১ম—আমি সম্পূর্ণ নিরাপদে আছি। ২য়—আমার অজ্ঞাতে কত শত ছেলে মেয়ে ছাদ হইতে পড়িয়া মরে আমি কিছুই জানি না। ৩য়—এই ছেলেটাকে রক্ষা করা আমার সাধ্যতীত। তবে আমি কেন চেঁচাইলাম? ব্যাপারখানা এই—
প্রথমতঃ আমি যে নিরাপদে আছি তাহা—সেই ‘আমি’টীকে ভুলিয়া গিয়াছিলাম। ২য়—আমি যেন ঐ ছেলে হইয়া গিয়াছি বোধ করিতেছিলাম। প্রথমটীতে জ্ঞানীরা বলেন ইহা প্রকৃতির ‘আবরণশক্তি’ ও দ্বিতীয়টিকে তাঁহারা ‘বিক্ষেপশক্তি’ নাম দিয়াছেন। ব্রহ্ম হইতে বিচ্ছিন্ন চিদংশ স্বস্বরূপ ভুলিয়া সংসার রঙ্গমঞ্চে জীবনলীলার অভিনয় করিতেছে। তাহা শুধু ঐ “আবরণ বিক্ষেপ” ক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নহে। আত্মবিস্মৃত হইয়া বুদ্ধিকে আমি জ্ঞান করিলাম, ইন্দ্রিয়ের স্পর্শে যাহাই একটু সুখপ্রদ বোধ হয় তাহার সঙ্গেই আমাকে বিক্ষিপ্ত করিয়া ক্ষেপিয়া উঠিলাম।