কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
তিনি লিখেছেন, ‘নিবেদিতার মুখের ভাবে অনুভব করেছিলুম তিনি সন্তুষ্ট হননি।’ পাঠকের মনে হতে পারে হঠাৎ নিবেদিতার প্রসঙ্গ এখানে এল কেন— এটি কি অনিচ্ছাকৃত লেখার ভুল? সম্ভবত তা নয়। নিবেদিতার প্রসঙ্গ টানার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এই যে, নিবেদিতা-রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সংযোগ এবং তার ফলশ্রুতিতে তাঁদের বহুবিধ বিষয়ে নিবিড় আলাপ-আলোচনার ফাঁকে কখনো দেবেন্দ্রনাথ-শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গ এসে থাকবে। স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা ও রামকৃষ্ণসঙ্ঘের অন্তর্ভুক্তা নিবেদিতা বিভিন্ন সূত্রে এ ব্যাপারে অবহিত ছিলেন বলেই মনে হয় এবং দেবেন্দ্রনাথের শ্রীরামকৃষ্ণকে নিমন্ত্রণ ও পরে তা প্রত্যাহারের মধ্যে যে কিছুটা রূঢ়তা ছিল তার বেদনার ছাপই হয়তো শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ অনুরাগিণী নিবেদিতার মুখে রবীন্দ্রনাথ দেখে থাকবেন। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অনুমান, দেবেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণকে যে যথোচিত শ্রদ্ধা করেননি তার কারণ শ্রীরামকৃষ্ণ প্রতিমাপূজক ছিলেন এবং দেবেন্দ্রনাথ প্রতিমাপূজার তথা ‘বিগ্রহের’ সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।
‘কথামৃতে’ উদ্ধৃত শ্রীরামকৃষ্ণ-কথিত বর্ণনার সঙ্গে রোলাঁর বর্ণনার মূল পার্থক্য এইখানে, পূর্বোক্ত বর্ণনায় দেবেন্দ্রনাথ ও শ্রীরামকৃষ্ণের আলাপচারিতার মধ্যে যে অন্তরঙ্গতা ফুটে উঠেছে রোলাঁর বর্ণনায় তার অভাব। কিন্তু তা সত্ত্বেও রোঁলার দুইজনের সাক্ষাৎকারের বর্ণনাময়—যা রবীন্দ্রনাথ পাঠ করেছিলেন—এমন কিছুই তো ছিল না যাতে মনে হতে পারে দেবেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণকে যথোপযুক্ত সম্মান জানাননি—উপরন্তু বিগ্রহ মানা না মানার ব্যাপারটাই উপরোক্ত সাক্ষাৎকারের দুটি বর্ণনার মধ্যে কোনওটিতেই নেই। শ্রীরামকৃষ্ণের উপরোক্ত বর্ণনানুযায়ী মথুরানাথ তাঁকে কালীর পূজারী তথা বিগ্রহপূজক বলে দেবেন্দ্রনাথের কাছে পরিচয় করিয়ে দেননি, ‘ঈশ্বর ঈশ্বর করে পাগল’, এই বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং বিগ্রহপূজক শ্রীরামকৃষ্ণকে দেবেন্দ্রনাথ যথোচিত শ্রদ্ধা করেননি কারণ, তিনি একেবারেই বিগ্রহ মানতেন না—রবীন্দ্রনাথের এ ব্যাখ্যা কি গ্রহণযোগ্য? তাহলে পূর্বোক্ত চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের বিগ্রহের প্রসঙ্গ এবং সে সংক্রান্ত আলোচনাটাই অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় না কি? উপরন্তু রবীন্দ্রনাথের এই আলোচনা প্রসঙ্গে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘আপনার সত্য ও ন্যায্য কথাগুলি অনেকের পক্ষে প্রীতিপ্রদ হবে না’—গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। যেমন আগে আভাস দেওয়া হয়েছে, শ্রদ্ধাহীনতার প্রকাশ যদি হয়ে থাকে তাহলে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছাড়াই দেবেন্দ্রনাথের নিমন্ত্রণপ্রত্যাহারের উপলক্ষেই ঘটেছে—আর অন্য কোনও ভাবেই নয়।
রবীন্দ্রনাথের পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী দেবেন্দ্রনাথ বিগ্রহ একেবারেই মানতেন না সেইজন্য বিগ্রহ-উপাসক শ্রীরামকৃষ্ণকে দেবেন্দ্রনাথ যথোচিত শ্রদ্ধা করেননি। কিন্তু এই ব্যাখ্যার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।