সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
এবার লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজমাতা। কয়েকদিন আগে তাঁকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নাকি বলেন, ‘বাংলায় ৩ হাজার কোটি টাকা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে। এই টাকা গরিব মানুষের। তাঁদের মধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ ক্লার্ক হওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। নতুন সরকার গঠন হলে আইনের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে চাই। আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। যাঁরা এই টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দিতে চাই। আপনি বাংলার মানুষকে একথা বলুন।’ কোনও দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা এমন প্রতিশ্রুতি দিলে কেউ তা গায়ে মাখত না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি ঘিরে একরাশ প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। কারণ, নিয়ম হল, বাজেয়াপ্ত টাকা আদালতের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজিওনাল হেড অফিসে জমা রাখতে হয়। প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা পিএমএলএ আইন অনুযায়ী মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত টাকা ব্যবহার করা যায় না। সুতরাং সব মামলার নিষ্পত্তি হয়ে অভিযোগ প্রমাণের আগে কী করে সেই অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী? তাছাড়া ঘুষের বিনিময়ে চাকরি পাওয়াটাও একটি অপরাধ। যিনি ঘুষ দেন, আইনের চোখে তিনি কি অপরাধী নন? সুতরাং কোন যুক্তিতে তাঁকে টাকা ফেরত দিতে পারে রাষ্ট্র? তাই ভোটের মুখে এও একরকম ‘জুমলা’ বলে মনে করছে বিরোধীরা। মোদি সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে নানা প্রতিশ্রুতির মোড়কে মানুষের আস্থা অর্জনের মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন নমো।
তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক, কোনও একটা পদ্ধতি-নিয়ম-আইন করে বাংলায় ইডির বাজেয়াপ্ত করা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন মোদি। তাহলেও প্রশ্ন ওঠে, ইডি কি শুধুই পশ্চিমবঙ্গে টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে? তাঁর সরকারের মন্ত্রী গতবছর সংসদে তথ্য দিয়ে জানিয়েছিলেন, ২০১৪ থেকে ২০২৩-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। তাহলে কেন এই সব টাকাই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন না মোদি? বিরোধীদের অভিযোগ, একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যে সরকারি প্রকল্পের বরাত পেতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ অর্থ ‘কাটমানি’ হিসেবে আদায় করে শাসকগোষ্ঠী। মোদি কি এই বিপুল অর্থ ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন? অথবা কোটি কোটি টাকা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত যাঁরা বিজেপিতে নাম লিখিয়ে ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের থেকে সেই অর্থ বাজেয়াপ্ত করে তিনি কি তা ফেরানোর ব্যবস্থা করবেন? এসবের উত্তর সকলেরই জানা। আসলে আমাদের ‘ধর্মভীরু’ প্রধানমন্ত্রী রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও নিজে এসব ধর্মের কথা শুনতে নারাজ। ঘটনা পরম্পরা বলছে, প্রতিশ্রুতি দেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। সেই অভ্যাস তিনি বদলাবেন, এমনটা আশা করলে আবার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।