আজ ব্যবসাদিক্ষেত্রে শুভ অগ্রগতি হতে পারে। কর্মস্থলে জটিলতা কমবে। অর্থাগম যোগ আছে। ... বিশদ
কিন্তু, বিপুল বিশাল জনসংখ্যাও অধিক পরিমাণ জিডিপি এবং রাজস্ব সংগ্রহের গ্যারান্টি দেয় না। সেই মানুষগুলি বিভিন্ন কাজের উপযুক্ত হওয়াটাই হল পূর্বশর্ত। কেউ বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ করে প্রচুর ফসল তৈরি করবেন, আবার কেউ কারখানার নিরাপদ পরিবেশে উৎপাদন করবেন। কেউ চালাবেন গাড়ি, রেল, বিমান। কিছু মানুষ খনি, সমুদ্র কিংবা জঙ্গল থেকে সম্পদ আহরণ করে আনবেন। আর একদল মানুষ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকবেন কিংবা নিযুক্ত হবেন প্রশাসনিক কর্মে অথবা গবেষণায়। কিন্তু এতক্ষণ যেসব পেশার কথা বলা হল, সেগুলিতে যুক্ত হওয়ার আগে মানুষগুলিকে কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পর্ব উত্তীর্ণ হতে হয়। তার জন্য জরুরি প্রত্যেকের সুস্বাস্থ্য। জীবনধারণের স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাই সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একজন নারী বা পুরুষ সুশিক্ষা এবং উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে আর সামান্য মানবসন্তান থাকেন না, তিনি হয়ে ওঠেন মানবসম্পদ (হিউম্যান রিসোর্স)। যে-দেশে জনসংখ্যার বেশিরভাগটা যুব, সেই সমাজের খুশি হওয়ার কারণ অনেক। তবে শর্ত একটাই, সেখানকার লোকজনকে অবশ্যই মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে ফেলতে হবে।
আর এখানেই হেরে গিয়েছে ভারত। অথচ আমাদের ১৪৪ কোটি মানুষের মধ্যে ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নীচে। ভারতীয়দের মেধার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সংশয় নেই। তবু ৭৭ বছরের স্বাধীন দেশ এই যুবশক্তিকে মানবসম্পদ করে তুলতে বহুলাংশে ব্যর্থ হয়েছে। তাই প্রতিটি রাজ্যে বেকারের ছড়াছড়ি, বাড়ছে নানা ধরনের ক্রাইম এবং জিডিপির বৃদ্ধি কখনোই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারছে না। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফের পূর্বাভাস অনেকাংশে মুখ থুবড়ে পড়ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এই প্রেক্ষিতেই আক্ষেপ করেছেন বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ‘মেকিং ইন্ডিয়া অ্যান অ্যাডভান্সড ইকনমি বাই ২০৪৭: হোয়াট উইল ইট টেক’ শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, মোদি সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ঘোষণা করেও দেশকে উৎপাদন শিল্পে স্বনির্ভর করতে পারেনি। দেশে সুযোগ নেই দেখে বহু তরুণ উদ্যোগী সিঙ্গাপুর কিংবা সিলিকন ভ্যালি চলে যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্যের নিহিতার্থ হল, অন্তত এইভাবে ২০৪৭ সালেও ‘উন্নত’ অর্থনীতির পংক্তিতে বসার যোগ্য হয়ে উঠবে না ভারত। এজন্য রাজনের পরামর্শ, ‘সোনালি সময়ের’ সুযোগ নিয়ে মানবসম্পদের বিকাশ ও দক্ষতা বৃদ্ধি। অবিলম্বে পর্যাপ্ত কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে, যেমন তেমন নয়, প্রসার ঘটাতে হবে শ্রমনিবিড় শিল্পের। অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন যে-কথাটি বলেননি কিংবা কোনও কারণে এড়িয়ে গিয়েছেন, সেটি আরও গুরুত্বপূর্ণ—মোদি যে কায়দায় দেশ পরিচালনা করেছেন এভাবে ভারত কোনও দিনই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবে না। ধর্ম ও ভাষা নিয়ে অনাবশ্যক মাতামাতি এবং বিভাজনের রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে সর্বপ্রকারে। আধার, সিএএ, এনআরসি নিয়ে মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত রাখার কারবারে দাঁড়ি দিতে হবে এখনই। চিরতরে ছাড়তে হবে ‘অপারেশন লোটাস’ এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোবৃত্তি। ফেরাতে হবে প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থা। মানুষ যদি মন খুলে চলতে ফিরতেই না পারে, তারা কাজটা করবে কখন ও কীভাবে? মোদি সরকার যেভাবে একটি আস্ত দশক পার করল, তাতে বেকার এবং দুর্বল শ্রেণির মানুষই বাড়বে, যাদের সর্বক্ষণের চাহিদা থাকবে সরকারি অনুদান ও ভর্তুকির। এই নীতির আনাগোনা আপন বলে বলীয়ান মানবসম্পদ সৃষ্টির পথ থেকে বহু যোজন দূরে।