বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
জনসংখ্যাকে জনসম্পদ বা মানবসম্পদে রূপান্তরিত করাই হল একটি দেশের আসল সার্থকতা। তার জন্য প্রতিটি মানুষের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে হবে সবার আগে। খিদে দূর করা মানে কোনওমতে পেট ভরানো নয়, পুষ্টির বন্দোবস্ত করাও তার আনুষঙ্গিক শর্ত। ওইসঙ্গে সবার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কাজ বা চাকরি ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই জনসংখ্যা ‘বোঝা’ বা ভয়ের কারণ না-হয়ে বরং ‘মানবসম্পদ’ হয়ে উঠবে—যে মানুষ উৎপাদনের নানা ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদান রাখবে এবং অন্য সকল দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ ও জয়ী হবে। তাই সমাজ ও অর্থনীতির পণ্ডিতরা মানব উন্নয়নের অন্যতম শর্তের মধ্যে সকলের জন্য গৃহকে রাখতে বলেছেন অগ্রাধিকারের তালিকায়। পুরনো দিনে সরকার গ্রহণ করেছিল ইন্দিরা আবাস যোজনা। বর্তমান জমানায় ওই প্রকল্পটিকেই সময়োপযোগী করে নাম পাল্টে রাখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য গরিব গৃহহীনদের মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা করা। প্রকল্পটি চার-পাঁচ বছর আগের হলেও রূপায়ণে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। সমস্যাটি কোনও একটি বা দুটি রাজ্যের নয়, সারা ভারতের। তাই গত বছরের শেষদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে নতুন কিছু শর্ত আরোপ করেছে এবং বাড়িয়েছে নজরদারি। সরকারি প্রকল্প ও কর্মসূচি রূপায়ণে অস্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি যেখানে পদে পদে, সেখানে এমন পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। কিন্তু সমস্যা আবার এখানেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় একসঙ্গে সব রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসক দলের সরকার থাকা সম্ভব নয়। বহু রাজ্যেই অন্য দলের সরকার চলে। যেমন এই মুহূর্তে কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার চললেও পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, ওড়িশা, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, বিহার, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, দিল্লি প্রভৃতি রাজ্যে একাধিক বিরোধী দলের সরকার গদিয়ান।
তাই কেন্দ্রের মোদি সরকারের নীতি সব রাজ্যের জন্য একরকম নয়। বিজেপি শাসিত বা ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের অনেক দোষ তারা দেখেও দেখে না, আবার বিরোধী পার্টির সরকারের বেলা পানের থেকে চুন খসলেই হয়ে ওঠে খড়্গহস্ত। বিরোধী সরকারের রাজ্যের সাফল্যকে কুর্নিশ জানাতে বা পুরস্কৃত করতেও তারা সদাসর্বদা কুণ্ঠিত। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভূমিকা শুধু নিন্দনীয় নয়, ক্ষতিকরও। এতে একইসঙ্গে দুর্বল ও নস্যাৎ হয় গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শ। সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কারণে গণতন্ত্র ধ্বংস হতে থাকলে তার পরিণাম কতটা ভয়ঙ্কর হয়, তার প্রমাণ শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের সাম্প্রতিক করুণ চেহারা! দেশবাসী প্রত্যাশা করে, এই প্রেক্ষিতে সতর্ক হবে মোদি সরকার এবং জনমুখী প্রকল্পগুলিকে সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা থেকে দূরে রাখবে। এই প্রসঙ্গেই নবান্নের ন্যায্য দাবি মেনে আবাস যোজনায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা কর্তব্য। কারণ মোদি সরকারের কড়া শর্তাগুলি পূরণ করে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে মমতার সরকারই সবচেয়ে বেশি বাড়ির অনুমোদন দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, অসম, বিহার প্রভৃতি রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে বাংলা। ভালো কাজের জন্য বাংলা পুরস্কৃত হলে অন্য রাজ্যগুলিও এই সুস্থ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হবে। তাতে লাভবান হবে বাংলাসহ সারা দেশ। যারা উপকৃত হবে, দিনের শেষে তারা দেশেরই মানুষ। সকলের জন্য মাথার উপর ছাদ বা স্বাস্থ্যকর বাসস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া ভারতবাসীকে সুস্থ জীবন দেওয়ার সাংবিধানিক অঙ্গীকার পূরণ হতে পারে না।