অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
দেশবাসী নিশ্চয় ভোলেনি, ২৫ মার্চ, ২০২০ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, মহাভারতের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল ১৮ দিনে। তাঁর নেতৃত্বে ভারত করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধটা জিতবে ২১ দিনে! কিন্তু বাস্তবটা দেশবাসী উপলব্ধি করছে নিজেদের জীবন দিয়ে। ১৪ মাসেও মহামারী থেকে রেহাই মেলেনি ভারতবাসীর। বরং হঠাৎ করে ভারতের উপর চেপে বসেছে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ দ্বিতীয় ঢেউ। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর মিছিল বেলাগাম হয়ে উঠেছে। গত দু’মাসে আমাদের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা! সারা পৃথিবীর কাছে ভারত করুণার পাত্র হয়ে উঠেছে। জনস্বাস্থ্যরক্ষার প্রশ্নে ভারতের মুখ মান ভীষণ নিচু হয়ে গিয়েছে। ২১ মাসেও যে নিষ্কৃতি মিলবে তেমন রুপোলি রেখা ভারতের ভাগ্যাকাশে দেখা যাচ্ছে না। মোদি সেদিন লড়াইটাকে ২১ দিনের হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। লড়াইয়ের আয়ুষ্কাল ১৮ দিনের কম বললেও অবশ্য ফলাফল আলাদা কিছু হতো না। ব্যাপারটা তো তাঁর অনেক ‘কথার কথা’র একটি বই নয়। করোনা মোকাবিলায় তাঁর সরকারের মাহাত্ম্য দেখছেন রোগীরা, দুর্গত পরিবারগুলি। দুরু দুরু বুক নিয়ে কাছ থেকে দেখছেন দেশের অন্যরা, মিডিয়া মারফত বিদেশিরাও। আদালতে আদালতে চলছে মোদির সরকারকে ভর্ৎসনার পালা। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিকে সুপ্রিম কোর্ট ‘জাতীয় সঙ্কট’ আখ্যা দিয়েছে। চিকিৎসায় লেজেগোবরে হওয়াটাই একমাত্র দুর্ভাগ্য নয়, ভ্যাকসিন নিয়েও দেশকে এক ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে কেন্দ্র।
ফের আসতে হচ্ছে মোদির ‘এক ভারত’ প্রসঙ্গে। ৪৫ ঊর্ধ্ব যেসব নাগরিক প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ প্রাপ্তির কী হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। ওইসঙ্গে ঘোর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ নিয়ে। সম্প্রতি মোদি সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সবাই একদামে ভ্যাকসিন পাবেন না। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেন্দ্র পাবে সর্বনিম্ন দামে। রাজ্যগুলিকে কিনতে হবে তার থেকে বেশি দামে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির হাতে ভ্যাকসিন তুলে দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্র নেবে না। তাদেরকে কিনতে হবে সরাসরি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানির কাছ থেকে। প্রস্তুতকারকরা বেসরকারি হাসপাতালকে বেচবে আরও বেশি দামে। অর্থাৎ নাগরিকদের টিকা কিনতে হবে ব্যক্তিগতভাবে এবং চড়া দামে। সরকারের এই ভয়ানক বৈষম্যের নীতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কম বয়সিরা। কারণ ১৮-৪৪ বছরের নাগরিকদের বিনামূল্যে টিকাকরণের কোনও কর্মসূচি সরকার নেয়নি। সরকার মনেই রাখেনি, ৫০ কোটি ভারতবাসী অতি দরিদ্র। চড়া দামে ভ্যাকসিন কিনে নেওয়াই যদি ভবিতব্য হয়, তবে বহু কোটি মানুষ টিকাকরণের বাইরে রয়ে যাবেন। যার ভিতরে সারা দেশের জন্যই এক অশনিসঙ্কেত রয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রের এই ভূমিকাতেই প্রমাণ হয় যে, মোদি সরকার ‘এক ভারত’ নীতিতে আদৌ আস্থাশীল নয়, এটা তাদের কাছে একটা কথার কথা মাত্র। বিরোধী শক্তিকে জব্দ করার একটা উগ্র জাতীয়তাবাদী কৌশলের অধিক নয়। এক দেশ, এক ভ্যাকসিন, অথচ পাঁচ রকম দাম! স্বভাবতই এর ভিত্তি নিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। করোনা মোকাবিলার জাতীয় পরিকল্পনাও জানতে চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সরকার এখনও সদুত্তর দেয়নি। সব নাগরিকের সুষ্ঠু টিকাকরণ যদি আদালতের মাধ্যমেও নিশ্চিত হয়, তবে দেশ ভীষণ আশ্বস্ত হবে। আদালত ও আইনব্যবস্থার প্রতি বেড়ে যাবে আরও আস্থা ভরসা। আদালতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে দেশ।