অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ক্লান্তি, প্রিয়জনের বিপথগামিতায় অশান্তি ও মানহানির আশঙ্কা, সাংসারিক ক্ষেত্রে মতানৈক্য এড়িয়ে চলা ... বিশদ
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি নেওয়া হল না কেন? মোদি কি এখনও ‘সেলফ প্রোমোশন অ্যাবাভ নেশন’-এ আস্থা রেখেছেন? ভারতের প্রকৃত প্রয়োজনটা ফার্স্ট ওয়েভের সময়েই বুঝে নেওয়া জরুরি ছিল। সরকারের চিন্তার দৈন্যই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে ভারতে। অর্ডার দিয়েছে একের পর এক দেশ। কয়েকটি বড় দেশ তো তাদের প্রয়োজনের দ্বিগুণ পরিমাণ ভ্যাকসিন কিনেছে ভারত থেকে! আর তাদের বেশিরভাগই অর্ডার দিয়েছে মোদি সরকার অর্ডার দেওয়ার ঢের আগে। আন্তর্জাতিক সম্পর্করক্ষা বিদেশনীতিতে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিশেষ করে এই ভুবনায়নের যুগে। তাই বলে কেউ নিজের নাগরিকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বন্ধুকৃত্য করে না। মোদি সরকার বস্তুত সেটাই করেছে। যার জন্যে পৃথিবীর বৃহত্তম উৎপাদক দেশ ভারতকেই আজ ভ্যাকসিনের জন্য বিদেশের মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছে। রাশিয়াসহ একাধিক দেশ থেকে ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনও সন্দেহ নেই, সরকারের অদূরদর্শী মস্তিষ্কের কারণেই আজ এই দুর্ভোগ। সংক্রমণের বিপদ মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শিখর স্পর্শ করবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভাইরাসের নয়া ভ্যারিয়েন্টগুলি আগের থেকে বেশি বিপজ্জনক বলেই মনে করা হচ্ছে। আরও ভয়ের ব্যাপার এই যে, এখনকার ভ্যারিয়েন্টগুলি আর বয়স বাছবিচার করছে না। কেউ হলফ করে বলতে পারবে না যে কম বয়সিদের ভয় নেই। বরং উল্টো। এখন কম বয়সি অনেক ছেলেমেয়েই করোনার শিকার হচ্ছে।
স্বভাবতই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে। প্রথম দু’দফায় কিছু মানুষ বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পেয়েছেন। কিছু মানুষ বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিজ খরচেও ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এই ব্যবস্থা অতীত হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। টিকাকরণের নীতি পাল্টেছেন মোদি। নয়া নীতিতে রাজ্য সরকার এবং সাধারণ মানুষের ঘাড়েই চাপছে খরচের বোঝা। তুলে নেওয়া হয়েছে দামের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রথম ডোজ ২৫০ টাকায় মিলেছিল। সেটাই এবার কিনতে হবে অনেক বেশি দামে। কারণ ভ্যাকসিন জোগানের দায় কেন্দ্র আর নেবে না—রাজ্যের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেবে না। বেসরকারি হাসপাতালকে সরাসরি তা প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে কিনতে হবে। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের ইচ্ছুক নাগরিকরা সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে টিকা এখনও পাবেন। কিন্তু ১৮-৪৫ বছরের নাগরিকদের নিখরচায় কোনও ডোজ সরকার দেবে না। তাদের কিনেই নিতে হবে। আরও বৈষম্য এই যে, প্রস্তুতকারক সংস্থা কেন্দ্রকে যে দামে বেচবে রাজ্যগুলিকে সেই দামে দেবে না, রাজ্যগুলিকে কিনতে হবে বাড়তি দামে। খেয়াল করার মতো বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচ জায়গায় বিধানসভার ভোটের লড়াইতে বিজেপির আশাদীপ ক্ষীণ হয়ে আসতেই মোদিবাবু কার্যত হাত তুলে নিয়েছেন। সিদ্ধান্তটির পিছনে রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার পরিচয়ই স্পষ্ট হচ্ছে। মোদির এই ভূমিকা নিন্দনীয়। মনে রাখতে হবে, অন্তত ৫০ কোটি ভারতবাসী অত্যন্ত গরিব। তাঁদের পক্ষে ভ্যাকসিন কেনা অসম্ভব। কারও জীবনের দাম এতটুকু কম নয়। বাঁচার অধিকার সবারই সমান। তাই বিনামূল্যে সকলের টিকাকরণের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ এবং পি এম কেয়ার্সের মহিমা দেখান নরেন্দ্র মোদি।