বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
কিন্তু দেশবাসী পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করল যে, স্বাধীনতা লাভের সাত দশক পরেও এসব বাস্তবে পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে গরিব মানুষ শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে বিশেষভাবে বঞ্চিত রয়ে গিয়েছে। সরকারি নথিতে লম্বা চওড়া কিছু দাবি করা হলেও বাস্তবের সঙ্গে তার সম্পর্ক সামান্যই। অথচ, এই জিনিসটা বোঝার চেষ্টা করা হয়নি যে, দারিদ্র্য নামক ব্যাধির উৎস অশিক্ষা এবং ভগ্নস্বাস্থ্য। দারিদ্র্য আসলে একটা দুষ্টচক্র—আরও আরও দরিদ্র মানুষ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেয় দারিদ্র্য। তাই কল্যাণকামী রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত—সুশিক্ষিত, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নাগরিক তৈরির পথে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাওয়া। পিছিয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা কমাতে হবে রাষ্ট্রের স্বার্থে। তার জন্য হাতিয়ার করতে হবে সবার জন্য শিক্ষা এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যকে। সবদিক থেকে সক্ষম মানুষ যত বেশি থাকবে রাজকোষে তত বেশি রাজস্ব জমা হবে। সরকার পরিকাঠামো গড়ার প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে পারবে তত বেশি এবং দ্রুত। উন্নত পরিকাঠামোকে ধরে খুলে যাবে উন্নয়নের দিগন্ত।
রাষ্ট্র সব জেনেও স্বাস্থ্যের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকে নাগরিকের ব্যক্তিগত দায় করে রেখেছে এতকাল। পশ্চিমবঙ্গসহ হাতে গোনা কয়েকটি রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে খুব সীমিত পরিসরে নিখরচায় কিছু চিকিৎসা পাওয়া যেত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এরাজ্যে সেই সুযোগের পরিধি কিছুটা বাড়লেও তাকে পর্যাপ্ত বলা যাচ্ছিল না। বিশেষ করে সমস্যায় ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। গরিবদেরও সকলে যে প্রয়োজন মতো চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছিল তাও নয়। মানুষের এই কষ্ট মেনে নিতে পারছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। শ্রেণি নির্বিশেষে সব নাগরিকের চিকিৎসার সমস্যা ও দুশ্চিন্তা দূর করতে তিনি চালু করলেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। কার্ড পাওয়ার সমস্যা দূর করতে আনা হল দুয়ারে সরকার কর্মসূচি। তার ফলে ইচ্ছুক বেশিরভাগ পরিবারই এই কার্ড পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা আর নাগরিকের হাতে কার্ড থাকলেই তো সমস্যা মিটছে না। অনেক বেসরকারি হাসপাতালই ক্যাশলেস পরিষেবা দিতে চাইছিল না। নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দিচ্ছিল রোগীদের। তাতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছিল গরিব এবং কম লেখাপড়া জানা মানুষগুলো। এর স্থায়ী সমাধান করতে রাজ্য সরকার সব হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে দিল। ন্যূনতম দশ বেড থাকলেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডধারী পরিবারকে এখন থেকে নির্দিষ্ট পরিষেবা দিতে বাধ্য থাকবে সমস্ত হাসপাতাল ও নার্সিংহোম। রাজ্যের এই নির্দেশ অমান্যকারী সংস্থাকে সরকারের চূড়ান্ত পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সরকার তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। সুখের কথা এই যে, বেশিরভাগ নার্সিংহোম এবং হাসপাতাল এই জনমুখী প্রকল্পের পরিষেবা দিতে সম্মত হয়েছে। বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নতুন পথ দেখালেন। সবার জন্য স্বাস্থ্য নামক নাগরিক অধিকারকে বাস্তব রূপ দিলেন, যা ভারতের অন্য যে-কোনও রাজ্যের কাছে কল্পনারও অতীত একটা ব্যাপার। অনুমান করা যায়, আগামী দিনে সারা ভারতে এটাকেই অনুসরণ করার জোরদার দাবি উঠবে। মমতার নেতৃত্বে বাংলা ফের প্রমাণ করল, মানুষের কল্যাণের কথা সে আজও ভারতের আগে ভাবতে পারে।