বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ছয় বছর হতে চলল কেন্দ্রে মোদি সরকার রয়েছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিবস মহাসমারোহে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। গোটা বছর ধরেই অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা নিয়ে এগচ্ছে মোদি সরকার। রাজ্যের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আছেন নেতাজি। দেশের শাসকের তা অজানা নয়। ছয় বছর ক্ষমতায় থেকেও যে সরকার নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটির পাশাপাশি দেশপ্রেম দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবিকে মান্যতা দেয়নি সেই সরকারই আবার বাংলার ভোটের বছরে দেশবরেণ্য এই মনীষীর জন্মদিবস সরকারি পর্যায়ে মহাসমারোহে পালনের পরিকল্পনা করছে! যদি বলা হয়, ভোটের বছরে এভাবেই নেতাজিকে নিয়ে বাঙালির আবেগকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তাহলে সেটা কি খুব অসঙ্গত হবে? অতীতে কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে এমন প্রবণতা বারবার লক্ষ করা গেছে। বাঙালি মননকে স্পর্শ করতে কখনও রবীন্দ্রনাথ, কখনও বঙ্কিমচন্দ্র, রামমোহন রায়, শহিদ ক্ষুদিরাম—এমন অনেক মনীষীর প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের স্থান মানুষের হৃদয়ে। রাজনীতির আঙিনায় নয়। অথচ দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নেতাজির স্বপ্নের আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকে স্মরণীয় করে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। আইএনএ দিবসে আর তিনি লালকেল্লা মুখো হয়ে পতাকা তুলতে যাননি। এমনকী সেখানে হয়নি কোনও বড় মাপের সরকারি পর্যায়ে অনুষ্ঠানও। লোকসভার পর এবার বাংলার বিধানসভার ভোটের পালা। তাই নেতাজি নিয়ে বাঙালির ভাবাবেগকেই কাজে লাগানোর চেষ্টায় যে ত্রুটি থাকবে না তা বলাই বাহুল্য। বাংলা জয়ের লক্ষ্যে আগামী কয়েক মাস নিশ্চয়ই অনেক সভা-সমাবেশ করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। তার আগে বাংলার মনীষীদের নিয়ে আরও অনেক পাঠ নিতে হবে তাঁকে। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন যে দেখাচ্ছেন তিনি। কিন্তু সোনার বাংলা গড়তে তো অনেক অর্থের প্রয়োজন। কোভিড সঙ্কটকালেও তো বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গুরুদায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি তাঁর সরকার। বরং করোনা রুখতে রাজ্যগুলির বরাদ্দ তলানিতে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্র। কোপ পড়েছে গরিব মানুষের উপর। সংক্রমণের গোড়ার দিকে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে যে আর্থিক প্যাকেজ দিয়েছিল কেন্দ্র, সেখানেও অন্যান্য অনেক রাজ্যের তুলনায় কম বরাদ্দ জুটেছে বাংলার ভাগ্যে। এই কি বঙ্গপ্রীতি!
বাংলাকে বঞ্চিত রেখে ভোটের আগে শুধুমাত্র মনীষী স্মরণের মাধ্যমে বাঙালি ভাবাবেগকে উসকে দেওয়ার সুফল আদৌ মিলবে তো? এমন রাজনৈতিক চাল দেখে হয়তো শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে সামরিক সজ্জায় সজ্জিত দেশবরেণ্য ব্যক্তিটিও হয়তো মুচকি হাসছেন!