বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনাচিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
বিহার উত্তরপ্রদেশের পড়শি রাজ্য। দলিত ভোট এই নির্বাচনে একটা বড় ফ্যাক্টর। তাই দলিত বিরোধী তকমা ঘোচাতে হাতরাস কাণ্ড সামাল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিজেপি। বিপাকে পড়েই শেষ পর্যন্ত ঢোঁক গিলে উত্তরপ্রদেশ সরকার নিহত দলিত কন্যার পরিবার ও সাক্ষীদের জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করল। এমনকী আন্দোলন স্তিমিত করতে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের আর্জি জানিয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে সিবিআইকেও সরকারের কাছে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছে। এ যেন ভূতের মুখে রাম নাম! যে যোগী প্রশাসন ঘটনাকে ‘বিরোধীদের ষড়যন্ত্র’ বলে নিশানা করেছিল, নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর সৌজন্যটুকু পর্যন্ত দেখায়নি তাদেরই এখন ভিন্ন সুর! সরকারের নির্মম ভূমিকায় যখন সকলেই হতবাক, জনরোষ বাড়ছে তখন এই ভোলবদলের আসল উদ্দেশ্যটি স্পষ্ট হয়ে পড়ছে। আসল লক্ষ্য ভোট। বিহারের নির্বাচনে দরকার দলিত ভোট। তাই এমন কৌশল। এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। হাতরাসে নিহত দলিত কন্যার মৃতদেহ পরিবারের সম্মতি ছাড়াই পুড়িয়ে দিয়ে সেখানকার আইনরক্ষক পুলিস যে অমানবিকতার দৃষ্টান্ত রেখেছে তাকে ধামাচাপা দিতে পারেনি প্রশাসন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত। বিহার ভোটের আগে এসব আড়াল করার মরিয়া চেষ্টায় সফল তো হচ্ছেই না যোগী সরকার, উল্টে আরও দলিত নিগ্রহের ঘটনা সামনে আসায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রকট হচ্ছে। একের পর এক ঘটনার প্যাঁচে জড়িয়ে পড়ছে তারা। বিজেপি শাসিত রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার এই অবনতি গেরুয়া শিবিরকে ভোটের আগে যথেষ্ট বেকায়দায় ফেলল। তাই অন্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে নেতৃত্বকে দু’বার ভাবতে হবে পাল্টা অভিযোগ উঠলে সামাল দেবেন কীভাবে? পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে বিজেপি বারবারই সরব হয়েছে। তাদের সেই অভিযোগের আগুনে জল ঢেলে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা। নৃশংস ঘটনা আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে সেখানকার ‘দলদাস’ পুলিস। এই কারণেই অপরাধীদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে যোগীর রামরাজ্য। দলিত ও মহিলাদের উপর অপরাধের নিরিখে শীর্ষে এখন উত্তরপ্রদেশ। তাই মহিলা নিরাপত্তার কথা সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর মুখে হাস্যকর ঠেকে, বেমানানও। এতকিছুর পরও প্রধানমন্ত্রীর ধ্যান কিন্তু ভাঙছে না। তিনি নীরব। উত্তরপ্রদেশ বলেই কি তাঁর এই নীরবতা?
একটা হাতরাসকাণ্ড কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। এর আগেও নানা আচরণে প্রকাশ পেয়েছে শাসকের উচ্চবর্ণ তোষণের মনোভাব। দলিত বিরোধী তকমার গেরোয় এখন আটকে পড়েছে গেরুয়া শিবির। বিহারের বিজেপি একক ভাবে তেমন শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। হাতরাসকাণ্ডের জেরে সেখানে দলিত ভোটে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বিহারের ভোটে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে না পারলে সে ধাক্কা এসে লাগবে পশ্চিমবঙ্গের ভোটেও। বাংলা জয় করাটা এখন তাদের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত স্বপ্নপূরণ আদৌ হবে কি? পরিস্থিতি কিন্তু উল্টো ইঙ্গিতই দিচ্ছে।