বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
‘পরিযায়ী শ্রমিক’—শ্রমজীবীদের এই একটি শ্রেণী আমাদের মধ্যে বিরাটভাবে থেকেও যেন কোনওভাবেই ছিল না। আমরা জানতাম পরিযায়ী পাখিদের কথা শুধু। তারা খাদ্যের সন্ধানে বিভিন্ন ঋতুতে এদেশ সেদেশ করে বেড়ায়। ঘরের পাশের অগুনতি মানুষও যে পেটের দায়ে একই জীবনে অভ্যস্ত সে সম্পর্কে মধ্যবিত্ত সমাজ ওয়াকিবহাল ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্র? এখন দেখা যাচ্ছে, খোঁজটা রাষ্ট্রও রাখেনি অথবা রেখেও চরমভাবে উপেক্ষা করে গিয়েছে। লকডাউন ঘোষণার আগে দু’টি বিকল্প পথের যে-কোনও একটি গ্রহণ করতে হতো: (এক) লকডাউন বলবৎ হওয়ার আগেই নিরাপদে তাঁদের বাড়িতে ফেরাতে হতো, অথবা (দুই) বর্তমান কর্মস্থলেই তাঁদের থাকা খাওয়ার ন্যূনতম স্বাস্থ্যকর বন্দোবস্ত করতে হতো। এই সাময়িক ব্যবস্থা করা যেত কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের যৌথ প্রয়াসে। দীর্ঘ মেয়াদে কী কর্তব্য, তার বিবেচনা পরিস্থিতির স্বাভাবিকতার উপর নির্ভর করত অবশ্যই। কিন্তু এসবের কিছুই হয়নি। দীর্ঘ দু’মাসে কেন্দ্রের তরফে ঘোষিত একাধিক আর্থিক প্যাকেজ থেকেও পরিযায়ীদের জন্য কী জুটেছে—এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ ভুক্তভোগী পরিবার জানে না। সরকার যখন এতটা চোখবোজা, বিবেকহীন তখন আতান্তরে পড়ে যাওয়া মানুষগুলির সামনে আর কী অবশিষ্ট থাকে—নিজের পায়ের উপর ভরসা রাখা ছাড়া? দেশ-গাঁয়ে নিজের প্রিয় কুটির ভাঙা হলেও সেদিকেই পা বাড়ানো ছাড়া? হলই-বা তা কয়েকশো, এমনকী দু’-এক হাজার কিমি দূরে! শুকনো রুটি চিবিয়ে আছেন কিংবা খালি পেটেই—তবুও পরোয়া করছেন না তাঁরা। সঙ্গে আছেন স্ত্রী, শিশু, বৃদ্ধ বাবা-মা, পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্যও। আসন্নপ্রসবা মহিলাদেরকেও সঙ্গে নেওয়ার ঝুঁকি নিয়েছেন কেউ কেউ। নানা ধরনের মিডিয়ায় চোখ রাখতেই এখন আতঙ্ক হয়। কেননা কাগজের পাতা, টিভির পর্দা, সোশ্যাল মিডিয়া অধিকার করে আছে পরিযায়ী শ্রমিকদের অসংখ্য করুণ ছবি। ক্যামেরার ঝলকেও উঠে আসছে সেসব।
মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট আর মৃতের বিরামহীন মিছিল আমাদের সকলকে ভারাক্রান্ত করে তুলছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সংবেদনশীল মন চাইছে, মানুষগুলির দুর্ভাগ্যে এখানেই পূর্ণচ্ছেদ পড়ুক। বন্ধ হোক মরু অভিযানের থেকেও দুঃসাধ্য তাঁদের এই হেঁটে ঘরে ফেরা। নাগরিক ও নাগরিক সমাজের এই বৈধ দাবিতে সরকার যখন কর্ণপাত করছে না, তখন এক আইনজীবী বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের গোচরে এনে সুরাহা দাবি করেন। শুক্রবার এই বিষয়ে শুনানি করতে গিয়ে সলিসিটর জেনারেলের মাধ্যমে আদালত সরকারের বক্তব্য জেনে নেয়। তার ভিত্তিতে মামলাটি খারিজ করার পর্বে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সারা দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরা আদালত বন্ধ করতে পারবে না কিংবা বিষয়টির উপর নজরদারি করাও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। করণীয় যা প্রশাসনকেই করতে হবে। দেশবাসী মনে করছে, সরকারের শব্দ, শব্দবন্ধ, বাক্য ও পরিসংখ্যানের জাগলারি ঢের হয়েছে। এসব আর শুধু ক্লান্তিকর মনে হচ্ছে না, সব ছাপিয়ে তা হয়ে উঠেছে নিন্দনীয়, ভীষণ নিষ্ঠুর বিনোদন! দয়া করে এখনও কিছু করুন মহামান্য প্রধানমন্ত্রী। সর্বনাশের অর্ধেকটা এখনও ঠেকানোর সুযোগ আছে। পারলে সেটাই হবে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।