বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
দিল্লি পুলিসের ভূমিকা নিয়ে কিন্তু বারবার অভিযোগ, প্রশ্ন উঠছে। তা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া কাণ্ডই হোক অথবা জেএনইউ। এমনকী শাহিনবাগে পুলিসের নাকের ডগায় বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা ঘটেছে, কখনও দিল্লি পুলিসকে অতিসক্রিয় হতে দেখা গেছে, কখনওবা একেবারেই নিষ্ক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগও রয়েছে। দিল্লি পুলিস স্বরাষ্ট্রদপ্তরের অধীন বলেই ওই পুলিসকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়ার দায়িত্বটিও ওই দপ্তরেরই। এই দপ্তরের মন্ত্রী আবার অমিত শাহ, যিনি মোদি সরকারের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলেই পরিচিত। এক্ষেত্রে পুলিসি ব্যর্থতার কারণে কোনও বড় ধরনের অঘটন ঘটলে সরাসরি অভিযোগের আঙুল সেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দিকে ওঠাটাই স্বাভাবিক। কেন্দ্রের শাসকদল যেন তা স্মরণে রাখে। দুর্নীতিমুক্ত ভারত, সুশাসনের ভারত গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তাহলে এত হানাহানি কেন? দিল্লিতে যেরকম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে তা কি তাদের সেই ‘সুশাসনের’ পরিণতি? এই প্রশ্ন ওঠা কি অযৌক্তিক? ঘটনার সূত্রপাত, কেন্দ্রীয় সরকারেরই করা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) কেন্দ্র করে। সিএএ সমর্থক ও সিএএ বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অনেকে। আহতও বহু। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন দিল্লিবাসী। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলই বা কেন? কেন এমন পরিস্থিতি আটকাতে পারল না দিল্লি পুলিস? এটা কি তাদের অপদার্থতা নাকি নিরপেক্ষতার অভাব? প্রশ্ন তো উঠবেই। নাকি এর পিছনেও কারও পরোক্ষ মদত আছে! আর যাতে নতুন করে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দিল্লিতে শান্তি সুস্থিতি ফিরে আসে তার জন্য প্রশাসনকে উদ্যোগী হতেই হবে। কোনও প্ররোচনা সৃষ্টি না করে, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার মানসিকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে ভয়ঙ্কর হিংসার ঘটনা থামানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বাড়াতে হবে কড়া নজরদারি। শাসক বা বিরোধী উভয় রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও দায়িত্ব অনেকখানি। কোনও কোনও নেতাকেও উস্কানিমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাঁদের দলীয় কর্মী সমর্থকদের সংযত করার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। দরকার বাক্ সংযম। মানুষকে বোঝাতে হবে হানাহানি নয়, দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা জরুরি। বোঝাতে হবে ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শের কথা। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদেরও সচেতন থাকতে হবে। তাঁরা যেন কোনওরকম প্ররোচনার ফাঁদে পা দিয়ে হামলায় জড়িয়ে না পড়েন। গুজবে কান না দেন। মনে রাখা দরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই প্রশাসনের কাছে সমান নিরাপত্তা প্রাপ্য, তা তিনি যে ধর্মের বা যে ভাষাভাষীর মানুষই হোন না কেন।
আমাদের ভারতবর্ষ শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। মানবিকতাই এখানকার সবচেয়ে বড় ধর্ম। ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতেই আমরা ভালোবাসি। এই বিষয়টা মাথায় রেখে দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখার জন্য তাই সকলেরই এগিয়ে আশা উচিত। কোনও বিভেদ-বিভাজন নয়, আমরা সকলেই ভারতবাসী—এটাই আমাদের পরিচয়। এই বোধ থেকে আশা করা যায় অচিরেই দিল্লিতে শান্তি ফিরে আসবে। এবং তা ফেরানোর জন্য সরকারকেও যথোচিত উদ্যোগ নিতে হবে।