সঞ্জয় সরকার, কলকাতা: ক্রিকেট থেকে ফুটবল— জাতীয় স্তরে গত কয়েক বছরে ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই জোটেনি বাংলার কপালে। তবে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই না পাওয়ার হতাশা মিটিয়েছে মোহন বাগান। সোমবার ক্লাব তাঁবুতে কোচ ও ফুটবলারদের ফুল-মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘এখানেই থেমে থাকলে হবে না। এই ক্লাবের কাছে প্রত্যাশা অনেক। এগিয়ে যেতে হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী।’ দিদির অনুপ্রেরণায় আপ্লুত সবুজ-মেরুন কর্তা, ফুটবলার এবং সমর্থকরা। 
সোমবার দুপুর পৌনে একটা। মাঠে প্রবেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। গ্যালারি তখন ‘জয় মোহন বাগান’, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত। এরইমধ্যে মমতা পৌঁছে যান মঞ্চের একধারে রাখা আইএসএল ট্রফির কাছে। তা ভালো করে দেখেন। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ট্রফি তুলে দেন মোহন বাগান অধিনায়ক প্রীতম কোটাল। এরপর কোচ ও ফুটবলারদের প্রত্যেককে মিষ্টির ডালা তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্লাবের পক্ষ থেকেও মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরীয় ও স্মারক দিয়ে বরণ করেন সচিব। মঞ্চে হাজির ছিলেন ক্লাব সভাপতি টুটু বসু, মন্ত্রী অরূপ রায়। উল্লেখ্য, ছুটি কাটাতে ইতিমধ্যেই শহর ছেড়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের একাধিক ফুটবলার। এদিন অনুষ্ঠানে দুই বিদেশি তিরি ও জনি কাউকোর সঙ্গে হাজির ছিলেন প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, বিশাল কেইথ, সুমিত রাঠি, দীপক টাংরি, নামতে, কিয়ান নাসিরিরা।
গত শনিবার খেতাব জয়ের দিনই ক্লাবের নামের আগে এটিকে তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। এদিন এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অরূপকে বলেছিলাম, সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনায় বসতে। মোহন বাগানের আবেগটাই আলাদা। ক্লাবের নামের আগে এটিকে শুনতে ভালো লাগে না। মোহন বাগান এখন সুপার জায়ান্টস। দলের এই সাফল্যের জন্য প্রতিটি ফুটবলার ও কোচকে অভিনন্দন। তোমাদের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।’
মোহন বাগানের সাফল্যের দিনেও পড়শি ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলের নাম উল্লেখ করতে ভুললেন না মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সংযোজন, ‘মোহন বাগান পরিকল্পিতভাবে দল গঠন করেছে। সেই নিরিখে ইস্ট বেঙ্গল অনেকটাই পিছিয়ে। এবার ওরা ভালো দল করতে পারেনি। ওদের আর্থিক সঙ্কট। তবে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সেই সমস্যা নেই। বরং উনি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি দিয়ে ক্লাবকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।’ উল্লেখ্য, এদিন অনুষ্ঠানের মধ্যেই পুষ্পস্তবক দিয়ে মোহন বাগান কর্তাদের শুভেচ্ছা জানালেন লাল-হলুদের দুই প্রতিনিধি। 
মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই ক্রীড়াপ্রেমী। তাঁর সংযোজন, ‘‘আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, ফাইনালের ভোরে স্বপ্ন দেখেছিলাম, মোহন বাগান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খেলার আগেই অরূপকে মেসেজ করেছিলাম, ‘চিন্তা করিস না, বাংলার মান আজ মোহন বাগান রাখবে।’ আমরা গর্বিত।’’ এদিন চ্যাম্পিয়ন দলকে সংবর্ধিত করার পাশাপাশি ক্লাবকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদানের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। 
এদিকে, ২ এপ্রিল শিলিগুড়িতে মোহন বাগানের নামে রাস্তার সূচনা হতে চলেছে। পাশাপাশি পয়লা বৈশাখের সকালে চুনী গোস্বামীর নামাঙ্কিত গেটের উদ্বোধন হবে ক্লাব তাঁবুতে।