কর্মের উন্নতি হবে। হস্তশিল্পীদের পক্ষে সময়টা বিশেষ ভালো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মের প্রসার। আর্থিক দিকটি অনুকূল। ... বিশদ
সিমলিপাল থেকে পালিয়ে প্রথমে ঝাড়খণ্ড, তারপর সেখান থেকে গত ২০ ডিসেম্বর বাংলায় প্রবেশ করে বাঘিনি জিনাত। তখন থেকেই আতঙ্কে কাঁপতে শুরু করে জঙ্গলমহল। প্রথমে বেলপাহাড়ী, তারপর সেখান থেকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকার জঙ্গলে প্রবেশ করে জিনাত। রাইকার আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল জিনাত। বাসিন্দাদের একের পর এক ছাগল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বনদপ্তরের উপর ক্ষোভ বাড়ছিল। তাছাড়া, জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল বাসিন্দাদেরও যেতে দেওয়া হচ্ছিল না জঙ্গলে। তাদেরও রুজিতে থাবা বসিয়েছিল জিনাত। তাতে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তাদের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে জিনাতকে তারা বুঝে নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। পাছে জিনাতের কোনও ক্ষতি করে বসেন বাসিন্দারা, সেই ভয় সবসময় তাড়া করে বেড়াচ্ছিল বনকর্তাদের। তখনই কাজে লাগানো হয় সুন্দরবন স্ট্র্যাটেজি। বাঘ ধরতে জাল দিয়ে এলাকা ঘেরা শুরু হয়।
সুন্দরবন টিমের এক সদস্য বলেন, ছ’সাত ফুট উঁচু জাল জিনাতের পক্ষে লাফ দিয়ে বেরনো কোনও ব্যাপারই না। কিন্তু, জাল বাঘের মানসিক বাঁধনের কাজ করেছে। যেমন হাতিকে ছোট থেকে শিকলে বাঁধা অভ্যাস করলে সে আর শিকল ছেঁড়ার ক্ষমতাই দেখায় না, সেরকমই। জিনাত যেহেতু আগে এনক্লোজারের মধ্যে থেকেছে, তাই জাল তার কাছে আতঙ্কের। লাফানোর সাহস দেখায়নি। ওই সদস্যের যুক্তি, বোরোতে একবার জিনাত জাল ছিঁড়েছিল, তা জাল ভালোভাবে না লাগানোর দোষেই। কিন্তু, গোঁসাইডিতে জাল খুব আঁটোসাঁটো ভাবে লাগানো হয়েছিল। তাই তা আর করতে পারেনি জিনাত।
সিমলিপাল বনবিভাগের এক কর্তা বলেন, সুন্দরবনের টিম থেকে শুরু করে পুরুলিয়ার বনকর্তারা যেভাবে কাজ করেছেন, তাঁদের জন্যই জিনাতকে আমরা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।
গত শনিবার বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর ড্যাম সংলগ্ন গোঁসাইডি গ্রামের জঙ্গলে জিনাতের প্রবেশের খবর মিলতেই ভয়ে কাঁটা হয়ে যায় গোটা গ্রাম। তড়িঘড়ি গ্রামের প্রায় পাঁচটি পরিবারকে বাড়ি ছাড়তে হয়। আশ্রয় নেয় স্থানীয় একটি স্কুলে। শনিবার সারাদিন উনুন জ্বলেনি গ্রামের একটি বাড়িতেও। অবশেষে ৩৫ ঘণ্টা পর ওই গ্রাম থেকেই জিনাত ধরা পড়তেই বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটে। সন্ধ্যার পর ঘরে ফেরেন মনেশ্বরী হাঁসদা, ফুলটুসি হাঁসদারা। গোঁসাইডি গ্রামের সরলা হাঁসদা, দুলালি হাঁসদা, চাঁদমণি হাঁসদা রবিবার বলেন, বাঘের আতঙ্কে সারারাত ঘুম হয়নি। এবার শান্তিতে ঘুমাব।
মানবাজারের রেঞ্জার বিনয় মাহাত বলেন, গোঁসাইডি থেকেও যদি বাঘিনি কোনওভাবে পালাত, তাহলে ফের মানবাজারের দিকেই ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল।
কিন্তু, অবশেষে বাঘিনি ধরা পড়ায় সেই দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। পশুপ্রেমীদের দাবি, এর আগে ২০১৮ সালেও লালগড়ের বাঘঘোরার জঙ্গলে একইভাবে একটি বাঘ ঢুকে পড়েছিল। কিন্তু, বনদপ্তরের কর্তাদের গাফিলতির জেরে সেই বাঘকে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়। এবার তা এড়ানো গিয়েছে।