সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: মোদি-মহিমা কি এবার অস্তাচলে? গোটা দেশের পাশাপাশি এই জল্পনা উস্কে দিল আসানসোলও। অন্তত, এখানকার অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকার মানুষজনের একটা বড় অংশ এবার ভোটদানে বিরত থাকায় জল্পনাকে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। তাতে কপালের ভাঁজ আরও চওড়া হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের। 
কমিশনের তথ্য বলছে, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে এবার ভোট পড়েছে ৭৩.২৭ শতাংশ। চতুর্থ দফায় যে আটটি আসনে নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে সর্বনিম্ন। কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উঠে আসছে বিভিন্ন অবাঙালি এলাকাতে ভোট পড়েছে কম। অথচ, একটা সময়ে ওই সব এলাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি অদ্ভুদ এক মোহে আচ্ছন্ন ছিলেন অবাঙালিরা। তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন মোদি হবেন মসিহা। কিন্তু গত ১০ বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে তাঁরা এখন তিতিবিরক্ত। তাই কট্টর বিজেপির পরিবারেরও অনেকেই ভোটের দিন বুথ মুখো হননি। এই পরিসংখ্যান যত সামনে আসছে রক্তচাপ বাড়ছে বিজেপি শিবিরে। প্রকাশ্যে জয়ের আশা ছাড়তে নারাজ তারা।  
আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে যে কয়েকটি এলাকাকে এখনও গেরুয়া-গড় মানা হয়, তার মধ্যে অন্যতম বার্নপুর শহর। বিধানসভা হোক বা লোকসভা— বার্নপুরের বেশ কিছু অবাঙালি প্রভাবিত ওয়ার্ডে ঢালাও ভোট পায় বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি সেই সব জায়গা থেকে বিশাল লিড নিয়েছিল। ২০২২ সালের লোকসভা উপনির্বাচনে ৩ লক্ষ ৩ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। তখনও সেই সব ওয়ার্ডে লিড ধরে রেখেছিল বিজেপি। এবার ওইসব ওয়ার্ডেই ভোটের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। আসানসোল পুরসভার ৭৬ নম্বর ওয়ার্ডেই রয়েছে বার্নপুর টাউনের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখানে মোট ভোটার ৬ হাজার ৮৮৩টি।  ভোট পড়েছে মাত্র ৩ হাজার ২৯০। যা ৪৮ শতাংশরও কম। বার্নপুরের শাস্তিনগর পূর্ণিয়াতলাব এলাকা নিয়ে পুরসভার ৮০ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে মোট ভোটার ৮ হাজার ৮৬৮ জন। ভোট পড়েছে ৫ হাজার ৮৭৭। পুরসভার ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড অবাঙালি অধ্যুষিত নরসিংবাঁধেও ভোট পড়েছে ৭১ শতাংশ। 
আসানসোল পুরসভার ২৭ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কাউন্সিলার রয়েছেন। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণডাঙালে অবাঙালিদের বাস। পুরভোট থেকে বিধানসভা লোকসভা প্রতি ভোটেই বিজেপিকে তাঁরা কোনওদিন নিরাশ করেনি। এবার সেখানেও ৮ হাজার ৩৩২ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫ হাজার ৮৬৫টি।  পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ভোটার যেখানে ৭ হাজার ২২৪টি,  সেখানে ভোট পড়েছে ৪ হাজার ৯২৭টি।
কেন এমন ধস? রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ২০১৪ সালে দেশজুড়ে মোদি হাওয়া বইছিল। বিশেষ করে গোবলয়ে সেই হাওয়ার বেশ দাপট ছিল। আসানসোলের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকাতেও তার প্রভাব পড়ে। আসানসোল আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা কাণ্ডে জাতীয়তাবাদের পালে হাওয়া ধরিয়ে মোদি ম্যাজিকে শান দেয় বিজেপি। তাতে সুফল মেলে। আসানসোলে ফের জয়।  কিন্তু দশ বছরে মোদিকে নিয়ে যাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা হতাশ। কট্টর বিজেপি মানসিকতা নিয়ে অন্যত্র ভোট দেওয়াও বিড়ম্বনার। তাই আর ভোট কেন্দ্রের দিকেই পা না বাড়িয়ে ‘ভেটো’ প্রয়োগের রাস্তায় হেঁটেছেন অবাঙালিরা।  
জেলার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, এই ট্রেন্ড শুধু আসানসোলেই নয়। দেশজুড়ে চলছে। তিনি উত্তরপ্রদেশের কিছু কেন্দ্রে কম ভোট পড়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।  বিজেপি জেলা সহ সভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও হিসেবই কাজ করবে না। আসানসোলে জিতব আমরাই।’