ধনাগম যোগটি অনুকূল। দুপুর থেকে কর্মের বাধা মুক্তি ও উন্নতি। শরীর-স্বাস্থ্য সমস্যার যোগ। ... বিশদ
আরামবাগ স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। তিরিশের দশকে পুরশুড়ার ভক্তপাড়া বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল। প্রফুল্লচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে এলাকার কিশোর, তরুণরা ইংরেজ বিরোধী লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ইতিহাসের পাতায় সেই লড়াইয়ের কথা স্থান পায়নি। তবে স্বাধীনতা সংগ্ৰামী ভক্তপাড়ার বাসিন্দা গোপালবাবু সেই লড়াইয়ের স্মৃতি আজও আগলে রেখেছেন। বাড়ির উঠানে বসে গোপালবাবু স্মৃতিরোমন্থন করে এদিন বলেন, তখন আমার ১৪ বছর বয়স। গান্ধীর ডাকে দেশে অসহযোগ আন্দোলন চলছে। এক তরুণ যুবক আমাদের পাড়ায় আসত। গোপনে দাদাদের সঙ্গে মিটিং করত। অনেক পরে তাঁর নাম জানতে পারি। ততদিনে স্বাধীনতা আন্দোলনে আমি ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ইংরেজ পুলিস আমাদের গোপন ঘাঁটির কথা জেনে ফেলেছিল। মাঝেমধ্যেই পুলিস অভিযান চালাত। একবার প্রফুল্ল সেন সন্ধ্যার সময় ভক্তপাড়ায় এসেছিলেন।
পুলিস খবর পেয়েই পাড়া ঘিরে ফেলেছিল। ঘুঁটের বস্তার পিছনে লুকিয়ে সেবার প্রফুল্লদা ধরা পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। আর একবার মিটিং চলছিল। পুলিস সেবারও পাড়া ঘিরে ফেলে। অন্যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আমি গোপন কাগজপত্র সরাতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম। কিশোর বলে অবশ্য বেশিদিন জেলে থাকতে হয়নি। পায়ে একবার পুলিসের গুলিও লেগেছিল। তবে আমরা ইংরেজ পুলিসকে ভয় পেতাম না। সেই সময় ভক্তপাড়া স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের পাড়া বলে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াইয়েই শুধু অনুপ্রাণিত হয়নি। প্রফুল্ল সেন আমাদের শিক্ষা দিতেন স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশ গড়ার কাজে নামতে হবে। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে হবে। অহিংসার পথে যথাসম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু, সেই কাজ আজও সফলভাবে করে ওঠা সম্ভব হয়নি। এত দুর্নীতি দেখে মনে হয় সেদিনের এত লড়াই কি বৃথা গেল? তবে আশা রাখি তরুণ প্রজন্ম বাকি কাজ সম্পূর্ণ করবে। গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে। এবারও ঠিক করেছি, ভোট দিতে যাব।
গোপালবাবুর নাতবউ সন্তোষী ভক্ত বলেন, ১৫ আগস্ট, ২৬ জানুয়ারি এলে মানুষজন তাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। বাড়িতে এসে সেই সময়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা তাঁর কাছে শুনতে চান। পরিবারের সদস্য হিসেবে তাঁকে নিয়ে আমরা খুব গর্ব অনুভব করি।
ভক্তপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত বেরা বলেন, এলাকার মানুষ তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করেন। স্বাধীনতা সংগ্ৰামী হিসেবে তিনি পেনশন পান। ভক্তপাড়া স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের পাড়া হিসেবে আজও পরিচিত। নিতাই বেরা, নন্দলালা সাঁতরা, অরবিন্দ আদক, শচীন মণ্ডলের মতো তাঁর সহযোদ্ধারা একে একে মারা গিয়েছেন। একমাত্র উনিই জীবিত আছেন। গণতন্ত্র রক্ষায় এই বয়সেও এবার ভোট দিতে যাবেন। নিজস্ব চিত্র