নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নামকরণটি করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির ইঙ্গিত পাওয়ার পর আবহাওয়াবিদরা প্রথমে মনে করেছিলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আছড়ে পড়বে তামিলনাড়ু-অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে। তারপর ফণীর অভিমুখ উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে পরিবর্তিত হওয়ার পর মনে করা হচ্ছিল, এটা চলে যাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে। কিন্তু সেটাও হল না। ফণীর অভিমুখ হল ওড়িশা উপকূলের দিকে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে গিয়েই বিলীন হবে এই ঘূর্ণিঝড়। তবে সেই গমন পথটি হবে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে। বাংলাদেশে যখন পৌঁছবে ফণী, তখন সেটা শক্তি হারিয়ে পরিণত হবে নিম্নচাপে। কিছু বৃষ্টি দেওয়া ছাড়া আর বড় কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না সেখানে।
উত্তর ভারত মহাসাগর এলাকায় সৃষ্টি হওয়ার ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ করে এই এলাকার আটটি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড এবং ওমান আটটি করে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম নামকরণ করে রেখেছে। সেই নামের তালিকা অনুযায়ী পরপর ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়। এবার পালা ছিল বাংলাদেশের। তারা আগে থেকে ফণী নাম দিয়ে রেখেছিল। গত অক্টোবর মাসে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে যে ‘তিতলি’ ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে এসেছিল, সেটির নামকরণ করেছিল পাকিস্তান। ফণীর পর যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হবে, তার নাম দেবে ভারত। এখনও জন্ম না হলেও সেটির নাম ‘বায়ু’ হবে, এটা ঠিক হয়ে আছে।
পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে সর্বশেষ যে বড় ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি আছড়ে পড়েছিল, সেটা ছিল ‘আইলা’। ২০০৯ সালের ২৬ মে সুন্দরবনে আছড়ে পড়া ওই ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছিল মালদ্বীপ। ফণীর তূলনায় অনেক দুর্বল ছিল আইলা। তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এটি আছড়ে পড়ে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার ছিল। তবে এর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছিল। ২০০৭ সালে অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ২০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগের ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলে। মারা গিয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। এর নামকরণ করেছিল ওমান।
সাম্প্রতিক কালের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়েছিল ওড়িশার পারাদীপে। ১৯৯৯ সালের ওই ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়ছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। উত্তর ভারত মহাসাগর এলাকার ঘূর্ণিঝড়গুলির নামকরণ অবশ্য তখন শুরু হয়নি। তাই ওই ঘূর্ণিঝড়টির পরিচিতি এখনও ওড়িশার সুপার সাইক্লোন হিসেবে।
ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় আড়ইশো কিলোমিটার ছাড়ালে সেটিকে সুপার সাইক্লোনের অ্যাখা দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের ঘূর্ণিঝড় ‘নার্গিস’ দু’শো কিলোমিটারের কোটা ছাড়ালেও আড়াইশো অতিক্রম করেনি। তা সত্ত্বেও তার দাপটে মায়ানমারের লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়। নার্গিসের নাম দিয়েছিল পাকিস্তান। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফাইলিন’ ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল সেটিরও ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগ ছিল। লোকজনকে আগাম সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণহানি অবশ্য অনেক কম হয়েছিল। ওই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছিল থাইল্যান্ড।