নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১৩ ফেব্রুয়ারি: রাজ্যের আসন্ন পুরভোটে পুরসভা ভিত্তিক আলাদা ইস্তাহার প্রকাশ করবে বিজেপি। যাতে প্রতিটি পুর এলাকার সমস্যা আলাদাভাবে সাধারণের সামনে তুলে ধরা যায়। এমনকী পুরভোটের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের প্রতিটি পুরসভায় ন্যূনতম দুই থেকে তিনজন সদস্যের একটি কমিটি তৈরির কথাও চিন্তাভাবনা করছে গেরুয়া শিবির। এমনিতেই ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন পুরসভার নির্বাচনকেই সেমি-ফাইনাল হিসেবে দেখছে বিজেপি। আর সেই কারণে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার এই পুরভোটেই নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া হয়েছে গেরুয়া শিবির। দলীয় সূত্রের খবর, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যে ফলাফল হয়েছে, সেই রেশ যাতে বাংলার আসন্ন পুরভোটেও বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই দলের বঙ্গ নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। জানা যাচ্ছে, তা মাথায় রেখেই বাংলার বিজেপি নেতারা স্থির করেছেন, সাধারণ মানুষের আরও কাছে পৌঁছনোর জন্য এবার পুরসভা ভিত্তিক ইস্তাহার প্রকাশ করা হবে।
আজ এ ব্যাপারে বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সহনেতা সুরেশ পূজারি বলেছেন, ‘শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশের যে কোনও পুরভোটেই নির্বাচনী এজেন্ডা একটি পুরসভা থেকে অন্য পুর এলাকায় ভিন্ন হয়। তাই ইস্তাহারও আলাদা করা প্রয়োজন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে যেহেতু এই পুরভোটই বাংলায় শেষ বড় নির্বাচন, তাই এখানে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর কথা বলা হয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে। তবে পুরসভা ভিত্তিক আলাদা ইস্তাহার তৈরি করলেও পরে সবগুলিকে একত্রিত করে একটি সামগ্রিক প্রতিশ্রুতিপত্র তৈরি করা যেতেই পারে।’ বাংলার পুরভোটের রণকৌশল তৈরি করতে ইতিমধ্যেই শুক্র এবং শনিবার দু’দিনের বৈঠক ডেকেছে বঙ্গ বিজেপি। যেখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশেরও হাজির থাকার কথা। তবে ইন্দোরে পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকায় বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র দু’দিনব্যাপী ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের এক নেতা বলেন, ‘শুক্র-শনিবারের ওই বৈঠকেই পুরসভা ভিত্তিক আলাদা আলাদা ইস্তাহার প্রকাশের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পুরসভা ভিত্তিক ইস্তাহারে ঠিক কী কী ইস্যু তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি? দলীয় সূত্রের খবর, এর মধ্যে থাকবে, ১. সংশ্লিষ্ট পুরসভায় বিজেপি নির্বাচনে জিতে বোর্ড দখল করলে এলাকার উন্নয়নের জন্য কোন বিষয়গুলির উপর জোর দেবে, ২. বর্তমানে ওই পুরবোর্ড যে দল দখলে রেখেছে, তারা কোথায় কোথায় ব্যর্থ, ৩. এলাকায় কী কী সমস্যা রয়েছে এবং সেগুলির সুরাহায় অবিলম্বে কোন কোন পদক্ষেপ করা প্রয়োজন প্রভৃতি। এমনকী সংশ্লিষ্ট পুর এলাকায় প্রচারের অভিমুখও স্থির হতে পারে ইস্তাহার খতিয়ে দেখার পর। যদিও প্রচার সংক্রান্ত এই কাজটি সংশ্লিষ্ট পুর-কমিটির উপরই ছাড়তে চাইছেন দলের নেতারা। জানা যাচ্ছে, প্রতি পুরসভায় দু’-তিনজনের যে কমিটি তৈরির কথা ভাবা হয়েছে, তার সদস্যদের প্রধান কাজই হবে স্থানীয় ইস্যুকে সর্বসমক্ষে নিয়ে আসা। পাশাপাশি কোন বিষয়ের উপর জোর দিয়ে প্রচার করা হবে, তাও খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। এমনকী কমিটি পদক্ষেপ করতে পারে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও। পশ্চিমবঙ্গের পুরভোটের কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই রাজ্যস্তরে ৫৭ জনের একটি কমিটি করেছে বিজেপি।