মেষ: পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়লেও মন চঞ্চল থাকবে। কোনও হিতৈষী দ্বারা উপকৃত হবার সম্ভাবনা। ব্যবসায় যুক্ত ... বিশদ
পূর্ব কলকাতার বিদ্যাসাগর এলাকায় বাড়ি এক প্রাক্তন যাত্রাশিল্পীর। স্বচ্ছল পরিবার। মা এবং মেয়ে থাকেন বহুতল আবাসনে। লকডাউনের সময় স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি এবং বেশ কয়েকটি এনজিওকে ফোনাফুনি করে প্রায় এক মাসের মাছ সহ শাক-সব্জি, মুদির জিনিসপত্র নিয়েছিলেন।
উত্তর কলকাতার ময়দা গলি বেশ ভদ্রপাড়া। যথেষ্ট সচ্ছল পরিবার। গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা। তাঁদের দাবি, মাস দু’য়েক কোনও রোজগার নেই। তাই পুর-প্রতিনিধিকে সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ওই ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটরের কথায়, ‘বিনামূল্যে পেলে কে আর ছাড়ে বলুন! মাছ, ডিম, মাংস থেকে ওষুধ—কয়েক দিন পরপরই ফোন করে লম্বা লিস্ট ধরাতেন। নগদ টাকাও দিয়েছি।’ উত্তর কলকাতার ধীরেন ধর সরণীতে আর এক স্বচ্ছল পরিবারের অজুহাত ছিল আবার বাড়ির কাজের লোক। ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরকে জোগাতে হয়েছিল প্রায় মাস খানেকের আনাজপাতি।
শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম—সর্বত্রই বিক্ষিপ্তভাবে ‘চাহিদামূলক’ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি পুর-প্রতিনিধিরা। মানুষের পাহাড়প্রমাণ চাহিদার ফোনে জেরবার তাঁরা। করোনার সৌজন্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা চাহিদা প্রথমদিকে মিটিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু, তারপর কেউ হাল ছেড়েছেন, কেউ বা নমো নমো করে দায়িত্ব সেরেছেন।
গার্ডেনরিচ এলাকার এক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে দিন কয়েক আগে এমনই একটি ফোন পেয়েছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর। ফতেপুর লেনের ওই পরিবারটি বর্তমানে ১৪ দিনের হোম আইসোলেশনে রয়েছে। ফোনে বলা হয়, ‘আজকের জন্য দেড় কেজি মুরগির মাংস পাঠাবেন। সঙ্গে ডজন দু’য়েক ডিম। অন্তত ৬০-৭০ টাকা কেজির চাল ছাড়া আমরা খেতে পারি না। তাই ওই দামের চালই পাঠাবেন।’ এখানেই শেষ হয়নি ফর্দ। সঙ্গে ডাল, দুই প্যাকেট মাখনের দাবিও ছিল। চাহিদা শুনে কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর। কিছুটা মেটালেও বিপুল চাহিদার সবটা পূরণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘মাংস আমি পাঠাইনি। চালও অত দামি দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৪০-৪২ টাকা কেজির ৫ কিলো চাল, ডাল আর ২০টি ডিম পাঠিয়েছি।’
লকডাউনে নতুন প্রবাদ, ‘লজ্জা-ঘৃণা-ভয়-করোনা, চার থাকলে ফোনে বাজার হয় না।’