নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: করোনাকে হেলায় হারিয়ে তাঁরা বুঝেছেন রোগের থেকেও আতঙ্কই বেশি গ্রাস করেছিল। প্রথমদিকে এই ভাইরাস সমাজ থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। তবে বেশিদিন দমিয়ে রাখা যায়নি। আবার জীবনের মূলস্রোতে তাঁরা ফিরেছেন। সুস্থ হয়ে ফেরার পরও চলার পথ অবশ্য ততটা মসৃণ ছিল না। তাঁদের তখনও দূরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরাই এগিয়ে এসে ভুল ভেঙে দিয়েছেন। অনেকের মন থেকেই ভয় দূর করেছেন। এলাকায় ঘুরে ঘুরে বুঝিয়েছেন, করোনাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এবার সেই বার্তা তাঁরা রাজ্যের রাজধানীতেও পৌঁছে দিতে চান। পাশাপাশি কলকাতার গিয়ে করোনা আক্রান্তদের মনোবলও বাড়াবেন তাঁরা। সোমবার বহরমপুর থেকে বাসে চড়ে করোনা ‘জয়ী’রা কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিলেন। বাসে ওঠার আগে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা তাঁদের সংবর্ধনা জানান। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মীনা, ডিআইজি মুকেশ কুমার, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস সহ অন্যান্য আধিকারিকরা তাঁদের বাড়তি উৎসাহ দেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা কলকাতায় গিয়ে বিভিন্নভাবে করোনা আক্রান্তদের সহযোগিতা করবেন। আক্রান্তদের তাঁরা সাহস জোগাবেন। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যুবক-যুবতীদের একজোট করে কয়েকদিন আগে বহরমপুরে বিশেষ ক্লাব তৈরি হয়। দেশে এই ধরনের উদ্যোগ প্রথম বলে জেলা প্রশাসনের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তারপরই ঠিক হয় সুস্থ হয়ে ওঠা যুবক-যুবতীদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজে লাগানো হবে। ডিআইজি বলেন, আমাদের জেলায় ২০০জনের বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩০জনকে কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে। জেলাশাসক জয়ীদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, এটা নতুন ধরনের কাজ। আশা করি আপনারা ভালোভাবেই এই কাজ করতে পারবেন। চিকিৎসক অমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ওঁরা করোনা আক্রান্তদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত করবেন। আক্রান্তদের সামনে গিয়ে বলবেন, আমারও করোনা হয়েছিল। আমি সুস্থ হয়ে ফিরেছি। আপনিও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন। চিন্তার কিছু নেই।
কয়েকদিন আগে রাজ্যের অন্যতম করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বলেন, যাঁরা একবার আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের দ্বিতীয়বার হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তাই তাঁরা সহজেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। ডোমকলের এক করোনা জয়ী বলেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরও আমাকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অনেকেই এড়িয়ে চলত। বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও কেউ মিশত না। অন্যরকম আচরণ করত। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটাকেই কাজে লাগাব।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেউ করোনা আক্রান্ত হলে প্রতিবেশীরা কোনওরকম সহযোগিতা করেন না। তাঁদের হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয় না। করোনা যুদ্ধে জয়ীরা খবর পেলেই আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াবেন। প্রয়োজনে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবেন। বহরমপুরের মতো করোনা যুদ্ধে জয়ীদের নিয়ে অন্যান্য জেলাগুলিতেও ক্লাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, জেলাগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু পাল্লা দিয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। সুস্থ হওয়ার পর যুবক-যুবতীরা সমাজের স্বার্থে এগিয়ে এলে এই যুদ্ধে খুব সহজেই জয় আসবে বলে স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা মনে করছেন।