ব্রতীন দাস: ধানের জমিতে মাছ চাষ করে বাড়তি উপার্জন হতে পারে কৃষকের। উত্তরবঙ্গের মালদহে একই জমিতে ধান ও মাছ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এতে একদিকে যেমন কৃষকের আয় বৃদ্ধি হচ্ছে, তেমনই জমিরও উপযুক্ত ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি আধিকারিকরা। মালদহের উপ কৃষি অধিকর্তা (বিশ্বব্যাঙ্ক প্রকল্প) তথা প্রকল্প অধিকর্তা (আতমা) ঋষিকৃষ্ণ দে জানিয়েছেন, অপেক্ষাকৃত নিচু ও মাঝারি উচ্চতার জমিতে একইসঙ্গে ধান ও মাছ চাষ সবথেকে ভালো হয়। ধানখেতের চারদিকে আড়াই ফুট চওড়া ও তিন ফুট গভীর নালা কাটতে হবে। জমির ভিতরেই থাকবে ওই নালা। যে নালা কাটা হবে তার মাটি ছড়িয়ে দিতে হবে জমির আলে এবং জমিতে। প্লাবনে জমি ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে জমির চারপাশে দুই-তিন ফুট জাল দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। বিঘা প্রতি এক হাজার চারাপোনা ছাড়া যেতে পারে। ধান রোপণের ৫-৭ দিন পর মাছ ছাড়লে ভালো হয়। মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি জাতের ধান চাষ করলে মাছ বড় হওয়ার জন্য সময় পাওয়া যায়। ৪০-৫০ গ্রাম ওজনের মাছের চারা ৪-৫ মাসে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজন হয়। এভাবে এক একর ধানের জমিতে মাছ চাষ করে ৮০ হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আয় হতে পারে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ধানের জমিতে মূলত কই, মাগুর, শিঙি, শোল জাতীয় মাছ চাষ করা লাভজনক। নালাতে অল্প অল্প করে মাছের খাবার দিতে হবে। ধানের জমিতে অ্যাজোলা ছড়িয়ে দিতে পারলে আরও ভালো। মাছ অ্যাজোলা খায়। এতে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। একই জমিতে ধান ও মাছ চাষ করলে ধানেরও ফলন বেড়ে যায়। কারণ, ধান খেতে মাছ ঘুরে বেড়ানোয় আগাছার উপদ্রব কম হয়। খেতে জমে থাকা জলে অক্সিজেনের জোগানও বাড়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ধানের জমিতে রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করা চলবে না। জৈব উপায়ে ধান চাষ করতে হবে। ধানখেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ রুখতে প্রয়োগ করতে হবে জৈব কীটনাশক। ধান কেটে নেওয়ার পর নালার জলকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প মেয়াদি একটি অতিরিক্ত ফসল ঘরে তুলতে পারেন কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কৃষক ধানের জমিকে ভেড়িতে রূপান্তরিত করেছেন। বেশি লাভের আশায় ধানের পরিবর্তে মাছ চাষ করছেন তাঁরা। পূর্ব মেদিনীপুরে এমন ঘটনা সবথেকে বেশি। ধান ও মাছ একইসঙ্গে চাষ করলে বাড়তি আয় হবে, আবার ধানের জমি ভেড়িতে পরিণত হওয়া ঠেকানো যাবে। মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামে হরিপদ মণ্ডল ও তাপস মণ্ডল নামে দুই কৃষকের জমিতে ধান ও পোনা মাছের প্রদর্শনী ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। এক বিঘা জমি থেকে তাঁরা ৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করেছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁদের প্রদর্শনী ক্ষেত্র ঘুরে দেখেন মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র। এই দুই কৃষককে দেখে এলাকার আরও কিছু কৃষক আগ্রহী হয়েছেন।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ধান-মাছের ২০টি প্রদর্শনী ক্ষেত্র করা হয়েছিল। সাফল্য মেলায় আগামী বছর আতমা প্রকল্পে মালদহে ২০০টি প্রদর্শনী ক্ষেত্র করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কৃষি আধিকারিক ঋষিকৃষ্ণ দে জানিয়েছেন, ধানের জমিতে মূলত কই, শিঙি, মাগুর মাছই চাষ করা লাভজনক। কিন্তু অনেকে পোনা মাছও ছাড়ছেন। তিনি বলেন, ধানের জমিতে যে চার-পাঁচ ইঞ্চি জল জমে থাকবে, তার মধ্যেই খেলে বেড়াবে মাছের ঝাঁক। ধান কেটে নেওয়ার পর জমিতে নালার জলে মাছ আশ্রয় নেবে। জমিতে মাছ থাকলে ধানের খোলাপচা, গোড়াপচার মতো রোগ কম হচ্ছে বলে দেখা গিয়েছে। জমিতে যদি অ্যাজোলা ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তা হলে একটা আস্তরণ তৈরি হবে। ফলে আগাছা বেশি জন্মাতে পারবে না।