মাঝেমধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। গবেষণায় আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
আদতে প্রত্যন্ত গ্রামের হাইস্কুল। তবে সেখানে ঢুকলে তা বোঝার উপায় নেই। শহরের যে কোনও নামীদামী স্কুলের সঙ্গে অনায়াসেই প্রতিযোগিতায় নামানো যেতে পারে এই স্কুলকে। কিন্তু চার-পাঁচ বছর আগেও স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। কিছুতেই পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে পারছিলেন না শিক্ষকরা। তারপরই ওই অভিনব উদ্যোগ নেয় উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া ব্লকের শকুন্তলা হাইস্কুল। স্কুল প্রাঙ্গণেই বানানো হয়েছে ছোট্ট চিড়িয়াখানা। আনা হয়েছে রং-বেরঙের বদ্রি পাখি । রয়েছে বিভিন্ন জাতের খরগোশ। অ্যাকোরিয়াম ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন রঙের মাছ দিয়ে। তৈরি করা হয়েছে জিমও। ফাঁকা সময়ে এসব নিয়ে সময় কাটাতে উৎসাহ দেখা যায় পড়ুয়াদের মধ্যে। ফের ক্লাসরুম ভরে উঠতে থাকে কচিকাঁচাদের ভিড়ে। শুধুমাত্র স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করে তুলতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে আমাদের স্কুলের তরফে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এর প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। সব উদ্যোগ নিয়েছিলেন আমার আগে দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক নবকুমার শাকারি। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির তরফেও অনেক সাহায্য করা হয়েছে। এই বিষয়ে নবকুমারবাবু বলেন, আমি একা নই, স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারাও এই ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছেন। এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার। সেই দারিদ্র্যের কারণেই স্কুলছুটদের সংখ্যা বাড়ছিল। তারপরই আলোচনা করে স্কুলকে নতুন রূপে তৈরি করা হয়। তাতে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি।
২০১৩ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলের দায়িত্ব নেন নবকুমার শাকারি। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি লক্ষ্য করেন, পড়ুয়ারা স্কুলবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। নানাকরম পরিকল্পনা করেও ফের ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না তাদের। দ্রুত এই অবস্থার পরিবর্তন করতে উদ্যোগ নিতে শুরু করেন নবকুমারবাবু। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়। স্কুলের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। স্কুল গেট দিয়ে ঢুকেই দু’দিকে খাঁচা তৈরি করে রাখা হয় খরগোশ ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। স্কুল প্রাঙ্গনে লাগানো হয় নানা প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ। স্কুলের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষকে মনীষীদের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। শুধু মনোরম পরিবেশ নয়, পড়ুয়াদের শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখারও সিদ্ধান্ত নেন নবকুমারবাবু। ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে কথা বলে অত্যাধুনিক জিমের ব্যবস্থা করেন তিনি। ব্যবস্থা করা হয় একাধিক খেলার সরঞ্জামের। পানীয় জল থেকে শুরু করে খাওয়ার ব্যবস্থা, দূর থেকে আসা পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলের ব্যবস্থাও করা হয়। এত কিছু সুবিধার ফলে বর্তমানে স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বর্তমানে স্কুলের দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ সিংহ।