বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
আগে গোটা মেখলিগঞ্জ জুড়েই ছিল মেখলি শিল্পের কারিগর। বর্তমানে মেখলিগঞ্জ শহর থেকে তিনবিঘা করিডরকে পাশে রেখে ১৫ কিলোমিটার গেলেই ধাপড়াহাট। সেখান থেকে সোজা রাস্তা ধরে ৪ কিলোমিটার গিয়ে ১১২ উপনচৌকি গ্রামে দেখা পাওয়া যাবে কয়েকজন মেখলি শিল্পীর। তবে এখন আর সবাই কাজ করে না। কেউ এসে বরাত দিয়ে গেলে তবেই তাঁরা মেখলি তৈরি করে দেন। তবে এখনও এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে মেখলিকে নতুন করে পরিচিতি করিয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকার মেখলি শিল্পী দীপালি রায়। নিজের তৈরি মেখলি নিয়ে তিনি কয়েকটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
কী এই মেখলি, যার নামে এই মহকুমার নামকরণ করা হয়েছে। দীপালিদেবী উঠোনে বসে এই প্রতিবেদককে জানালেন স্থানীয় ভাবে হাতের তৈরি পাটের সুতো দিয়ে মেখলি তৈরি করা হয়। এই মেখলি অনেকটা চাদরের মতো। তারমধ্যে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। পাপোশ থেকে শুরু করে পুজোর আসন, বিছানার চাদরের আকারে এগুলি তৈরি করা হয়। রাজবংশী সমাজের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই মেখলি ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। কিন্তু এখন আর বিয়েতে এটা আবশ্যক নয়। নানা কারণ এর ব্যবহার কমে গিয়েছে। তবে মেখলিগঞ্জের রাজবংশী সমাজে এখনও বিয়ের অনুষ্ঠানে মেখলির ব্যবহার দেখা যায়। তাঁরাই এসে বাড়িতে বরাত দিয়ে যান। স্থানীয় মেখলি শিল্পীরা বলেন,হাতে তৈরি পাটের সুতো তৈরি করতে অনেকটাই সময় লাগে। ফলে মজুরি খরচ অনেকটাই বেশি পড়ে। খাটের আকারের তৈরি একটি মেখলির দাম ৪০০০ টাকা দাম পড়ে যাবে। দীপালিদেবী জানান, কলকাতায় প্রদর্শনীতে গিয়ে তিনি দেখতে পেয়েছেন পাটের সুতো তৈরি করার মেশিন রয়েছে। সেই মেশিনে সুতো তৈরি করতে পারলে অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু মেশিন কোথায় পাওয়া যাবে, কত দাম? সেটাই এখনও খুঁজে বের করতে পারেননি প্রত্যন্ত এলাকার এই মেখলি শিল্পীরা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোট প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেখলিগঞ্জে এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে মেখলি উপহার দিয়ে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার আর্জি জানিয়েছিলেন মেখলি শিল্পীরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিলেও এখনও কিছু হয়নি।
কুচলিবাড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার সন্তোষ রায় বলেন, মেখলি শিল্পীরা বাজার না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। হ্যান্ডলুম বিভাগ কয়েকজন মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। একই সঙ্গে একটি সমবায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সমবায়ও এখন কোনও কাজ করছে না। সমবায়ে সরকারি সহায়তা না মেলায় মহিলারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। সরকারি আধিকারিকরা আসেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। এর বেশি আর এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি। এব্যাপারে চ্যাংরাবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, মেখলি নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মেখলিগঞ্জের নাম। তবে এখন নির্দিষ্ট বাজার না থাকায় এই শিল্প বিলুপ্তির পথে। স্থানীয় মেখলি শিল্পীদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি। মেখলিগঞ্জের মহকুমা শাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা মেখলি শিল্পীদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি। এনিয়ে মেখলি শিল্পীদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কীভাবে সহায়তা করা যায় তা আমরা ভাবছি।