কর্মপ্রার্থীদের কর্মলাভ কিছু বিলম্ব হবে। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য লাভ ঘটবে। বিবাহযোগ আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় থেকে ... বিশদ
প্রিয়জনকে বিপদে পড়তে দেখলে পড়াশোনা, যুক্তি, বিজ্ঞানবোধ অনেক সময় হার মানে। উপরওয়ালার প্রতি স্ত্রীর তীব্র অভিমান থাকলেও, ২৪ বছর ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসা করে চলা স্বামী ডাঃ আশিস মুখোপাধ্যায়ের কোনও আফশোস নেই। নয়াবাদে নিজের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন নতুন হাসপাতালে আজও রোগী দেখে যাচ্ছেন তিনি। ২৩ বছর ধরে ক্যান্সারের রোগীরাই তাঁর নিত্যসঙ্গী। আর এক বছরের বেশি সময় ধরে সেই ক্যান্সারই তাঁর নিত্যসঙ্গী। স্টেজ থ্রি গলব্লাডার ক্যান্সার ধরা পড়েছে তাঁর। কেমোথেরাপি আর জিন থেরাপি চলেছে গত এক বছর। অসম্ভব শারীরিক দুর্বলতা আর পেটে মাঝেমধ্যেই অসহ্য ব্যথা। এভাবেই তো সারাদিন কাটার কথা তাঁর। কিন্তু, সেই রুটিনকে জয় করেই দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছ’ঘন্টা রোগী দেখেন তিনি। শুধু সকালটুকু বিশ্রাম। ওই সময়টাই নিজের।
শুক্রবার নয়াবাদের হাসপাতালের বসে ডাঃ মুখোপাধ্যায় বললেন, বিশ্বাস করতে পারবেন না হয়তো, যে সময়টুকু আমি রোগী দেখি, নিজের ক্যান্সারের কথা মাথাতেই আসে না। শুধু রোগীই দেখে যাই। রাত ৮টায় রোগী দেখা শেষ হলে বাড়ি ফেরার পালা। তখন এই রোগ গ্রাস করার চেষ্টা করে শরীর-মনকে। আমাকে তা এখনও ছুঁতে পারেনি। মাঝেমধ্যে খুব দুর্বল লাগে, এই যা। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর এই চোদ্দ মাস রোগীদের মাঝখানে আমি আরও ভালো আছি।
কীভাবে হল? আশিসবাবু বললেন, ২০১৮ সাল। তখন আমি খুব ব্যস্ত নতুন হাসপাতাল নিয়ে। নিজের কিছুই খেয়াল করতাম না। মাঝেমধ্যেই জ্বর আসত। ছাড়ত, আবার আসত। সুগার থাকায় পেট ব্যথাটা তখন হতো না তেমন। শেষ অবধি ৩ সেপ্টেম্বর নিজের হাসপাতালেই সোনোগ্রাফি করালাম। রিপোর্টে লিভারে টিউমার ধরা পড়ল। এতদিন ধরে রোগী দেখছি তো, বুঝলাম কিছু একটা বিপদ আসছে। পরের দিন পেটস্ক্যান করালাম। দেখা গেল, গলব্লাডার থেকে লিভারে ক্যান্সার ছড়িয়েছে। বাড়িতে জানালাম। মুম্বইয়ের টিকিট কাটলাম। এই পেশায় আমার ‘গুরু’ ডাঃ এস এইচ আদবানির সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। সেখান থেকে আমেরিকা। সেখানে বায়োলজিক্যাল থেরাপি (জিন থেরাপি) চলল। এখন ওই জিন থেরাপি আর কেমোথেরাপি চলছে।
মগ্ন হয়ে বলে যাচ্ছিলেন কলকাতায় অল্প খরচে ক্যান্সার চিকিৎসায় অন্যতম জনপ্রিয় এই চরিত্র। ‘কিন্তু নিজে ডাক্তার হয়ে, অজস্র রোগীকে পরামর্শ দেওয়ার পরও বলছি, খুব অত্যাচার করেছি শরীরের প্রতি। বিশেষত পার্ক স্ট্রিটের হাসপাতালে থাকার সময়। সকাল ৮টায় সামান্য কিছু খেয়ে বেরিয়ে পড়তাম বাড়ি থেকে। বিকেল ৪টে পর্যন্ত খাওয়ার ফুরসত পেতাম না। শুধুই রোগী দেখতাম। শুধু তাই নয়, নতুন হাসপাতাল করার জন্য আমানুষিক টেনশন আর মানসিক চাপ ছিল। বহু বছর ধরে সুগার আছে। স্পষ্ট করে জেনে রাখা ভালো, স্ট্রেস আর খাওয়া-দাওয়ার বদভ্যাস কিন্তু ক্যান্সার ডেকে আনতে পারে। বিশেষত গলব্লাডার ক্যান্সার।
ক্যান্সার আক্রান্তদের বাড়ির লোকজনদের জন্য আপনার কোনও পরামর্শ? আশিসবাবুর পাশে বসে থাকা স্ত্রী বললেন, প্রিয়জনের ক্যান্সার ধরা পড়লে প্রচণ্ড মন ভেঙে যায়। আমার, মেয়ের—দু’জনেরই তাই হয়েছিল। কিন্তু, ওকে দেখে একবার মনে হবে না, ক্যান্সার হয়েছে। এতটাই মনের জোর। জানেন, ওর রোগীরা ফোন করে করে সাহস জোগায়। বলে, ডাক্তারবাবু, আপনার কিছু হবে না। হতেই পারে না। আমরা কাকে দেখাব তাহলে? এর চেয়ে বড় আশীর্বাদ কিছু আছে। বলুন! চোখ ছলছল করছিল সোমাদেবীর।