নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুজো যত এগিয়ে আসছে, কুমোরটুলির প্রতিটি অলিগলি হয়ে উঠছে ততই প্রাণচঞ্চল। রবিবার দুপুরে পটুয়াপাড়ার রবীন্দ্র সরণী, বনমালি সরকার স্ট্রিট, কুমোরটুলি স্ট্রিট সহ আশপাশ চত্বরে ঘুরে দেখা গেল, সব মৃৎশিল্পীর ঘরে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। একেকটি ঘরে কোথাও ছ’জন, আবার কোথাও আট দশজন করে শিল্পী একত্রে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করে চলেছেন। ক’দিন আগেও সেখানে দেখা গিয়েছে, বাঁশের কাঠামোর উপর বিচালি ও মাটির প্রলেপ চাপানো হচ্ছে। এদিন দেখা গেল, সেই মাটির প্রলেপের উপর পড়েছে প্রাথমিক সাদা রং। কোথাও কোথাও সেই কাজ এগিয়ে রেখে আবার জোরকদমে চলছে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কাজ। এদিকে, দুর্গা পুজোর আগেই আছে গণেশ পুজো। এখন রাজ্যজুড়ে গণেশ পুজোও হচ্ছে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে বড় বাজেটের চোখ ধাঁধানো গণেশ পুজো রীতিমতো নজর কাড়ছে। এই পুজো যত বাড়ছে, কুমোরটুলিতে ফি বছর ‘গণপতি বাপ্পা’র চাহিদাও বাড়ছে। তাই পটুয়াপাড়ায় এখন দুর্গার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন নকশার গণেশ প্রতিমার কাজ চলছে জোর গতিতে। শিল্পী জীবন ঘোষ, সমর পালদের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত ১৮ রকমের গণেশ তৈরির কাজ চলছে কুমোরটুলিতে। ছোট বড় মাঝারি সব রকমেরই গণেশের বরাত পাচ্ছি। কেউ কেউ আবার তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী গণেশের ছবি দিয়ে যাচ্ছেন। সেই মতো চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কথা বলতে বলতেই পোস্তা এলাকা থেকে আট দশজন যুবক এলেন একটি ছ’ ফুটের গণেশের বরাত দিতে। বায়না হিসেবে দিয়ে গেলেন এক হাজার এক টাকা। যেদিকেই চোখ যায়, সেখানেই দেখা যায়, থরে থরে সাজানো রয়েছে নানান নকশার গণেশের মূর্তি।
এদিনও শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কিছু বারোয়ারি ও বাড়ির লোকজন আসেন প্রতিমার বায়না দিতে। অনেককেই দেখা গেল, মৃৎশিল্পীর ঘরে দুর্গা প্রতিমার বায়না দেওয়ার পর বায়নার রসিদ নিয়ে কুমোরটুলি স্ট্রিটের প্রাচীন সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে এসে পুজো দিতে। মন্দিরের পুরোহিত অভয় মুখোপাধ্যায় বলেন, রথের দিনও অনেকে এসে এখানে কাঠামো দিয়ে পুজো দিয়ে গিয়েছেন। প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর দিনও বেশ কিছু পুজো কমিটির কর্তারা প্রতিমা বায়না দেওয়ার আগে এখানে পুজো দিয়ে মায়ের প্রসাদি ফুল মাথায় ঠেকিয়ে তবেই বায়না দিতে যান। তবে পুজো বেশি দেন ছোট ও মাঝারি মাপের পুজো কমিটিগুলির কর্তারাই।
এদিনও কুমোরটুলির বিভিন্ন শিল্পীর ঘরে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষজন এসেছিলেন প্রতিমা তৈরির কাজ দেখতে। বেশ কিছু তরুণ তরুণী ও যুবক যুবতীকে দেখা গেল, একত্রে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখে সেলফি তুলতে। এতে কাজে বিঘ্ন হওয়ায় কিছু কিছু শিল্পী রীতিমতো রেগে গিয়ে দু’চার কথা শুনিয়েও দিচ্ছেন। তবুও উৎসাহের অভাব নেই। বেশ কিছু বিদেশিকেও দেখা গেল বিভিন্ন প্রতিমার ছবি তুলতে। কুমোরটুলি দর্শনের পর এই ভিড়ের অনেকেই আশপাশের ফাস্ট ফুডের দোকানগুলিতে ভিড় জমালেন।