কর্মে কিছুটা শুভ। খেলাধূলায় বিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন। মানসিক দিকটি বিক্ষিপ্ত থাকবে। ... বিশদ
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলায় শিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সংস্কারে তাঁর অবদান অসামান্য। এই জেলাতেই তাঁর জন্ম। অথচ জেলার স্কুলগুলিতে তাঁর একটা মূর্তি থাকবে না, তা কি হয়? সভাধিপতির সংযোজন, জেলার সরকারি বেসরকারি সমস্ত বিদ্যালয়গুলিতে যাতে বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপন করা যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিকেও আবেদন করব, যাতে এই মহৎ কর্মযজ্ঞে তাঁরাও এগিয়ে আসেন। জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রাথমিক ও ৯৭৩টি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকশ বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, বাংলার শিক্ষা ও সমাজের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র উম্মুক্ত ও উদার মননের প্রতীক। তাঁর বিদ্যা ও দয়া, কোনওটাই ভোলার নয়। তাই আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মদিনের আগেই যাতে মূর্তি স্থাপন করা যায়, তার জন্য অনুরোধ করা হবে সমস্ত স্কুলকে।
১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামে (পূর্বতন হুগলি জেলার ও পরে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত) জন্ম বিদ্যাসাগরের। উনিশ শতকের বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগরের আবির্ভাবকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ণনা করেছেন এক অতি আশ্চর্য ঘটনা হিসেবে। তাঁর বিখ্যাত ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘আমাদের এই অবমানিত দেশে ঈশ্বরচন্দ্রের মতো এমন অখণ্ড পৌরুষের আদর্শ কেমন করিয়া জন্মগ্রহণ করিল, আমরা বলিতে পারি না। কাকের বাসায় কোকিলে ডিম পাড়িয়া যায়-মানব-ইতিহাসের বিধাতা সেইরূপ গোপনে কৌশলে বঙ্গভূমির প্রতি বিদ্যাসাগরকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন বিদ্যসাগর। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একাধিক স্কুল। সেই সময়ে সমগ্র হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রচলন করেছিলেন বিধবা বিবাহ। তিনি বলতেন, ‘বিধবাবিবাহ প্রবর্তন আমার জীবনের সর্বপ্রধান সৎকর্ম। এ জন্মে যে ইহা অপেক্ষা অধিকতর আর কোনও সৎকর্ম করিতে পারিব, তাহার সম্ভাবনা নাই।’ বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপনের এই সিদ্ধান্তকে সাদরে গ্রহণ করেছেন জেলার বাসিন্দারা। যদিও তাঁদের দাবি, মূর্তি স্থাপনের পাশাপাশি বিদ্যাসাগরের আদর্শকেও পাথেয় করুক স্কুলগুলো। বিদ্যাসাগরের নীতির পাঠ আজ বড়ই প্রয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ‘মানুষ’ করার জন্য।