কর্মলাভের যোগ রয়েছে। ব্যবসায়ী যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা দুযবে। ... বিশদ
এ রাজ্য থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া পড়ুয়ারা সবচেয়ে সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার গন্তব্য আমেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে চীন-জাপানের অবস্থা শোচনীয় করে দিয়েছে করোনা। লন্ডন এবং আমেরিকার মতো চিরাচরিত দেশগুলির পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ফ্রান্স, স্পেন এবং ইতালিও বহু বছর ধরে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে উঠে এসেছে। প্রযুক্তি শিক্ষায় জাপানের পাশাপাশি সুলভে বিশ্বমানের চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সহযোগী বিষয়গুলি নিয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে চীন-রাশিয়া এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের কাছে অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে কয়েক বছরে। কিন্তু করোনার করাল থাবায় নাভিশ্বাস উঠেছে সব দেশেরই। ওই দেশে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু কবে আবার পড়াশোনার জায়গায় ফিরতে পারবেন, তা ভেবেই দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না তাঁদের।
ওই অধ্যাপক বলেন, উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ফেলোশিপ বা স্কলারশিপ। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর সেই দেশগুলির আর্থিক পরিস্থিতি বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ বা ফেলোশিপ দেওয়ার অবস্থায় থাকবে কি না, সেটাই দেখার। কাটছাঁট তো নিশ্চিতভাবেই হবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, এপ্রিলের শেষের দিকে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ই তো খোলেনি। গ্রীষ্মের ছুটি তুলে দেওয়া ছাড়া আর তো কোনও উপায় দেখছি না। এই অবস্থায় আরও একটা চিন্তা হল, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে? এর পাশাপাশি, সরকারি যে অনুদান আসে, তাতেও কতটা কাটছাঁট হবে, সে চিন্তাও রোজই ভাবাচ্ছে। সব মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার অবস্থা সঙ্কটজনক।
এক প্রবীণ অধ্যাপক বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ রয়েছে তাদের তুলনায় ইউনিটারি বা একক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাজ কিছুটা হলেও সহজ। তারা পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতির অনেক কিছুই নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করে নিতে পারে। যাঁরা পড়ান, তাঁরাই প্রশ্ন করেন এবং খাতা দেখেন বলে সেই সুবিধা আছে। সেটা মেনে নিয়েও একটি ইউনিটারি বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক বলেন, বেশ কিছু ফ্যাকাল্টিতে ছাত্র সংখ্যা বেশি হওয়ায় একটি বিষয় পড়ান অনেকে। কেউ একটা অধ্যায় দিয়ে শুরু করেন আবার অপর জন আরেকটি অধ্যায় থেকে। প্রশ্ন তৈরি করেন যে কোনও একজন। সেক্ষেত্রে সিলেবাসটা শেষ না হলে তো প্রশ্ন তৈরিই করা যাবে না। সবাইকে পাশ করাতে হলেও তো একটা নম্বর দিতে হবে। গড়ে সবাইকে একই নম্বর দিলে তো মামলা হবে। তাই পরীক্ষা নিতেই হবে। দু’টি পরীক্ষার মধ্যে ছুটি দেওয়া যাবে না।
যাদবপুরের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, এখনও কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও আইআইটিগুলিকে অনুসরণ করা যায় কি না, তা ভেবে দেখছি। প্রসঙ্গত, আইআইটি খড়্গপুর ৩০ মে পর্যন্ত এটাকে গ্রীষ্মাবকাশ ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে অনলাইন ক্লাস, স্টাডি মেটেরিয়াল দেওয়ার কাজগুলি চলতে পারে। জুন বা জুলাইয়ের শুরুতে পরীক্ষা নিয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে দু’টি সেমেস্টারের মধ্যে আর ফাঁকা সময় হয়ত থাকবে না।
অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগের অধ্যাপক তথা কুটার সম্পাদক পার্থিব বসু বলেন, যতই হোক, ক্লাসরুম টিচিংয়ের বিকল্প কখনও অনলাইন ক্লাসরুম হতে পারে না। এটা নিয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। প্রয়োজনে লিখিতও দেব। তবে এই অচলাবস্থায় উচ্চশিক্ষা যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল, তা মানছেন তিনি। বলেন, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামগুলি কীভাবে চলবে কে জানে? সবকিছুই তো বাতিল হচ্ছে, তাই ক্ষতির বহরটা আন্দাজ করা যায়।