ওয়াশিংটন, ৯ এপ্রিল (পিটিআই): শেষ প্রতিদ্বন্দ্বী সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সরে দাঁড়ানোয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তরফে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দৌড়ে রইলেন দেশের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিডেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নভেম্বরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াই হবে জো বিডেনের। গোড়াতে দেশের তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেলেও গত কয়েক সপ্তাহে বার্নি স্যান্ডার্স ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছিলেন। তাঁর প্রচারের হাতিয়ার ছিল স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য। কিন্তু, শেষপর্যন্ত এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে না দেখে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হলেন তিনি। সমর্থকদের উদ্দেশে স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘আপনাদের ভালো খবর দিতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু, মনে হয় সত্যিটা আপনারা সকলেই জানেন। ভোটের নিরিখে এই মুহূর্তে বিডেনের থেকে আমি পিছিয়ে পড়েছি। এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব। তাই, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তরুণ প্রজন্মের যে সমর্থন পেয়েছি, তাতে আমি অভিভূত। কিন্তু, ডেমোক্র্যাটদের জয় নিশ্চিত করতেই নিজেকে এই দৌড় থেকে সরিয়ে নিলাম।’ পাশাপাশি, জো বিডেনের সাফল্য কামনা করে আগাম শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন বার্নি স্যান্ডার্স। বলেছেন, ভবিষ্যতে বিডেনকে যে কোনও কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে তিনি প্রস্তুত।
সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পরই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তহবিল সংগ্রহের একটি অনুষ্ঠানে জো বিডেনের বিশেষ অতিথি হিসেবে দেখা যায় তাঁর এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে। প্রসঙ্গত, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সেনেটর (ক্যালিফোর্নিয়া) কমলা হ্যারিস গত বছরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট শিবিরের প্রার্থী হওয়ার লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। বিডেন ও হ্যারিসের এই রসায়ন নিয়ে ইতিমধ্যেই জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ, সম্পর্কের এই নতুন জোটের জন্য নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিডেন। তিনি বলেছেন, ‘পুরনো তিক্ততা ভুলে আপনি যে আমার প্রতি আস্থা রাখতে পেরেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আপনি যে এই বিশেষ উদ্যোগে সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন, তার জন্য নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি।’ বিডেনের এদিনের এই অনুষ্ঠানে ৫২ জন উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্টদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত টিভির স্ক্রিপ্ট রাইটার তথা প্রযোজক নরম্যান লিয়ার এবং ক্লিনটন জমানায় হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ডি ডি মেয়ার্স। এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন জার্মানিতে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জন এমারসন এবং কেএমই কনসাল্টিংয়ের প্রিন্সিপাল কিম্বারলি মার্টু এমারসন। উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই অনুষ্ঠান থেকে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা। কিন্তু, বাস্তবে সংগ্রহ হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি—দেড় লক্ষ মার্কিন ডলার। এই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফাঁপা নেতৃত্বের’ জন্য কড়া সমালোচনা করেছেন হ্যারিস। সেই সঙ্গেই জানিয়েছেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ক্ষমতা রয়েছে বিডেনের। হ্যারিস বলেছেন, ‘এই ধরনের (করোনা) কঠিন পরিস্থিতি থেকে দেশকে টেনে তোলার দুরন্ত ক্ষমতা বিডেনের রয়েছে। উপরন্তু, দেশের মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কারণ, দেশের মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যা বোঝার ক্ষমতা ওঁর রয়েছে।’ অন্যদিকে, দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য লড়াই থেকে স্যান্ডার্স সরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে বিডেন বলেছেন, ‘সুবক্তা হিসেবে ওঁর (স্যান্ডার্স) তুলনা মেলা ভার। আমি চাইব, বার্নি সদলবলে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার লড়াইকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।’ করোনা মহামারীর দাপটে স্বজন বিয়োগের ব্যথায় কাতর আমেরিকার অর্থনীতিও যে আজ বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েছে, এদিন তাও মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি বিডেন।