নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৩৬ ঘণ্টা পার। কিন্তু, এখনও জ্ঞান ফেরেনি পোলবার মারাত্মক পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুই বালক— দীপ্তাংশু ভকত এবং ঋষভ সিং-এর। দু’জনেই ভেন্টিলেশনে রয়েছে। ঋষভের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় শেষ চেষ্টার জন্য রাখা হয়েছে ইকমো নামে এক জীবনদায়ী যন্ত্রে। প্রথমজন পিজি হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারের আটতলার আইসিইউতে রয়েছে। দ্বিতীয়জনকে ইকমোতে রাখার জন্য শুক্রবার রাতেই পাঠানো হয়েছে কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের আইসিইউতে। দু’জনেই কোমাচ্ছন্ন রয়েছে। দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক হলেও দীপ্তাংশুর শারীরিক অবস্থা তুলনায় কিছু ভালো বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, শনিবারও অত্যন্ত সঙ্কটজনক থাকলেও ব্যথায় সামান্য সাড়া দিয়েছে ঋষভ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দুই বালককে বাঁচাতে এদিনও মেডিক্যাল বোর্ডে বসে পরবর্তী চিকিৎসার ধরন স্থির করেন বোর্ডের সদস্য সাত চিকিৎসক। যে কোনও ধরনের সংক্রমণ কাটাতে কী ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হবে, শ্বাসপ্রশ্বাস জারি রাখতে ভেন্টিলেশনের মোড কেমন থাকবে, যে কোনও ধরনের প্রাণঘাতী পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কী কী বিকল্প পথ নেওয়া যেতে পারে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বোর্ডে। পিজি’র সুপার ডাঃ রঘুনাথ মিশ্র বলেন, দুটি বাচ্চার অবস্থাই অত্যন্ত সঙ্কটজনক। জ্ঞান ফেরেনি। কোমাচ্ছন্ন রয়েছে। ইকমোর সাহায্যে ঋষভের শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমানো গিয়েছে। বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা কী হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। এদিন বোর্ডের সদস্যরা বসেছিলেন। ডাঃ মিশ্র বলেন, গাড়ি উল্টে যাওয়ায় দুটি শিশুরই মস্তিষ্কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্রেন স্টেম অংশে চোট লেগেছে। এই অংশটি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলিকে চালনা করে। গাড়ি উল্টে যাওয়ায় দু’জনেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এরপরই ফুসফুসে জল এবং কাদা ঢোকে। বিশেষত যেটুকু জেনেছি, ঋষভ নামে বাচ্চাটিকে শেষে উদ্ধার করা হয়, তাই ওর ফুসফুসের ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। আর জীবাণু সংক্রমণ কতটা হয়েছে, এখনই বোঝা যাচ্ছে না। পিজি সূত্রের খবর, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ইকমো আগে ব্যবহৃত হলেও শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার হল এই প্রথম। শরীরের কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুক্রবার রাত আটটায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যন্ত্রের সার্কিট প্রস্তুত না থাকায় রাতেই নির্মাতা সংস্থার লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়।
সূত্রের খবর, শুক্রবারই এই দু’জনের চিকিৎসায় একাধিক বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হয়েছে। সেখানে আছে শিশু শল্য বিভাগের প্রধান ডাঃ রুচিরেন্দ্র সরকার, চেস্ট বিভাগের প্রধান ডাঃ সোমনাথ কুণ্ডু, কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসক ডাঃ শুভেন্দু সরকার, নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ শুভাশিস ঘোষ, অর্থোপেডিক বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসক ডাঃ তন্ময় দত্ত প্রমুখ।
ঋষভ ও দীপ্তাংশুকে নিয়ে উদ্বেগের কারণ
ফুসফুসে কাদাজল ঢুকেছে। ঋষভের ক্ষেত্রে ইকমোর সাহায্যে বের করা হয়েছে কিছুটা। দীপ্তাংশুর অবস্থা সঙ্কটজনক হলেও কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে।
দু’জনেই মাথায় চোট লেগে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে শরীরের নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্কের ব্রেন স্টেম অংশে।
কয়েকটি পাঁজর ভেঙে গিয়েছে।
দীর্ঘক্ষণ নোংরা জলে ডুবে থাকায় প্রচুর কাবর্ন ডাই অক্সাইড ঢুকেছে। সংক্রমণ কতটা, কোথায় এখনই বোঝার মতো অবস্থা নেই।
ভালো লক্ষণ কী কী?
দু’জনেই জীবনদায়ী ব্যবস্থায় থাকলেও সামান্য হলেও ব্যথায় সাড়া দিচ্ছে ঋষভ। দীপ্তাংশুর ফুসফুসের অবস্থা তুলনায় কিছুটা ভালো।
দু’জনেরই শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমেছে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য-সূচকগুলি এখনও মারাত্মক রকমের উদ্বেগজনক নয়।
দু’জনেই রয়েছে শহরের অভিজ্ঞ ও বিভিন্ন বিকল্পের পথ জানা নামকরা চিকিৎসকদের অধীনে এবং পিজি’র মতো সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের পরিকাঠামোয়।