কর্মে কিছুটা শুভ। খেলাধূলায় বিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন। মানসিক দিকটি বিক্ষিপ্ত থাকবে। ... বিশদ
দিনকয়েক আগের একটি ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় অস্থায়ী কর্মীদের অমানবিকতা। ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর হাতের চ্যানেল খুলে গেল। পুনরায় চ্যানেল করার পর কিছু টাকা দাবি করলেন এক অস্থায়ী কর্মী। তাঁর দাবি, ‘মিষ্টিমুখ’ করতে কিছু টাকা দিতে হবে। মরণাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে যদি এই অবস্থা হয়, অল্প অসুস্থদের সঙ্গে কী হতে পারে কল্পনারও বাইরে।
এরকম নানা ছুতোয় রোগী ও তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে দিনরাত টাকা আদায় চলছে। না দিলে? পড়ে থাকতে হবে পরিষেবা থেকে ‘বঞ্চিত’ হয়ে। রোগীদের অভিযোগ, টাকার একটা অংশের ভাগ পেয়ে থাকেন স্থায়ী কর্মীরাও।
গঙ্গারামপুর হাসপাতালের ইনডোরে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের অবাধ বিচরণ। স্যালাইন থেকে ক্যাথিটার লাগানোর জন্য মিষ্টিমুখের টাকা না দিয়ে উপায়ও নেই। পুরুষ মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীর চ্যানেল করার কথা নার্সদের। সেই কাজ করে টাকা তুলছেন অস্থায়ী কর্মীরা। প্রসূতিদের ক্ষেত্রে মিষ্টিমুখ করতে টাকা দেওয়া এখন বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে পরিমাণও কয়েকগুণ বেশি।
হাসপাতালে এক রোগীর আত্মীয় কালু দাস কর্মীদের হাতে ‘অত্যাচারিত’ হওয়ার কথা শোনালেন। বললেন, বংশীহারি ব্লক থেকে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। খুলে যাওয়া স্যালাইনের চ্যানেল ঠিক করে লাগিয়ে এক অস্থায়ী কর্মী ১০০ টাকা নিলেন মিষ্টিমুখ করার জন্য। রোজই অনেকের এরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে।
রাজ্য সরকার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে উন্নত পরিষেবার জন্য বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে কর্মী নিয়োগ করেছে রোগীদের সাহায্যের জন্য। হাসপাতালে বেড পরিষ্কার করে চাদর পেতে দেওয়া, রোগীদের শৌচাগার যেতে সাহায্য করা, পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন হলে হুইল চেয়ারে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ করার কথা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের। হচ্ছে উল্টোটা। তাঁদের একাংশ এখন নার্সদের কাজ রপ্ত করে নিয়েছেন। সেসব করেই টাকা আদায়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় ওই কর্মীদের।
মুখ থুবড়ে পড়া জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের হাল কবে ফিরবে, সেদিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দাস বললেন, হাসপাতালে যে মিষ্টিমুখ করার নামে টাকা আদায়ের চক্র চলছে না, তা নয়। আমাদের কাছে অনেক অভিযোগ আসে। হাসপাতালে নজরদারির জন্য বারবার বলা হয় মিটিংয়ে। অনেক রোগীর পরিবার অভিযোগ না করে ভয়ে টাকা দিয়ে দেন রোগীর চিকিত্সায় গাফিলতি হতে পারে ভেবে।
গ্রামীণ এলাকার লোকজন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ভাবছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন টাকা নিচ্ছেন, সেটাই হয়তো সরকারি নিয়ম। আসলে এতে বদনামের ভাগীদার হচ্ছে সরকার। প্রশ্নের মুখে পড়ছে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। এর সবটাই হচ্ছে জেলাস্তরের আধিকারিকদের একাংশ চোখ বুজে থাকায়।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাসের কথায়, অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজ রোগীদের সাহায্য করা। সমস্যা হলে চিকিৎসক ও নার্সদের জানানো। অস্থায়ী কর্মীরা স্যালাইনের চ্যানেল করা ও ক্যাথিটার লাগাতে মিষ্টিমুখের নামে টাকা নিয়ে থাকলে খুব অন্যায়। ওই কাজ করার কথা চিকিৎসক ও নার্সদের। সুপারের কাছে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব। এরকম কাজ হয়ে থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুপার বাবুসোনা সাহা বলেছেন, মিষ্টিমুখ করার নামে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ কোনও রোগীর পরিবার করেনি। তবু বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।