কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কারও শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার— ... বিশদ
বরানগরের টবিন রোডে দেবকুমার মল্লিক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরেই বাড়িতে চাকরি পাওয়ার মিথ্যা কথা বলে পালিয়ে যান গুজরাতের প্যাটেলনগরে। সেখানে কাপড়ের নকশা করার কারখানায় শ্রমিকের কাজে যোগ দেন। মাঝে মধ্যে বাড়ি আসতেন। নয় বছর সেখানে কাটানোর পর ফিরে আসেন বাড়িতে। ফিরে কাপড় ব্যবসার কাজে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে তিনি সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন।
এরইমধ্যে তাঁর বাবা ও মা প্রয়াত হয়েছেন। তিনি নিজে বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। পাঁচ বছর আগে টবিন রোড এলাকার এক বৃদ্ধ দম্পতিকে কার্যত অনাহারে থাকতে দেখে দেবকুমার পরিকল্পনা নেন, তাঁদের প্রতিদিন খাবার দিয়ে যাবেন। দু’জন অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে পাঁচজন হন। সেই সংখ্যা বাড়তে বাড়তে আজ ৩০০ ছুঁইছুঁই। কোনও বৃদ্ধ দম্পতির সন্তান রয়েছে কিন্তু তাঁরা দেখভাল করেন না। কারও বা সন্তানই নেই। একলা থাকেন। তাঁদের বাড়িতেও খাবার পৌঁছে যায়। এলাকার ক্লাব বা বিশিষ্ট লোকজনকে বলা থাকে, পাড়ার কেউ অসহায় অবস্থায় দিন কাটালে যেন ফোন করে তাঁকে জানানো হয়। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও খবর পান দেবকুমার। পানিহাটি থেকে কাশীপুর পর্যন্ত অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ‘অন্নদাতা’ তিনি।
নিরামিষ খাবার। মিনিকিট চালের ভাত, মুগের ডাল আর একটা সব্জি। প্রতিদিন সব্জি পরিবর্তন হয়। খাবারের টিফিন বক্স পৌঁছে দেন দেবকুমারের ব্যবসার কাজে যুক্ত ছেলেরা। ঝমঝম করে বৃষ্টি বা পাড়ায় জল জমলেও ঠিক খাবারের বক্স পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট ঠিকানায়। প্রতিদিন এই খাবারের পিছনে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। সব টাকাটাই দেবকুমার ব্যয় করেন নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে। কারও কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নেন না।
বরানগরের গোপাললাল ঠাকুর রোডের বাসিন্দা বৃদ্ধ প্রতাপ গুহ একা থাকেন। তিনি গত তিন বছর ধরে দেবকুমারের দেওয়া খাবার খান। তিনি বলেন, এমন দিন নেই যে খাবার আসেনি। দেবকুমারের জন্যই বেঁচে আছি। নোয়াপড়ার রাধারানি সরকারের ছেলে রয়েছে। কিন্তু তাঁরা দেখভাল করেন না। তিনিও একই কথা জানালেন।
টবিন রোডে সাঁইবাবার একটি মন্দির গড়েছেন দেবকুমার। এই মন্দিরেই রয়েছে রন্ধনশালা। এখান থেকেই খাবার যায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়িতে বাড়িতে। কথা হচ্ছিল বছর চল্লিশের দেবকুমারবাবুর সঙ্গে। তিনি বললেন, বাবা মা’রা যেভাবে যত্নে সন্তানকে বড় করেন। সন্তানরা বড় হয়ে সেইভাবে দেখভাল করেন না। অনেকের সন্তান সরকারি চাকুরি করেন। কিন্তু খাবারটুকুও দেন না। দিলেও সেটা অবহেলা করে। যেসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সন্তানরা দেখভাল করেন না, আর যাঁদের সন্তান নেই। তাঁদের জন্যই আমি এই কাজে ব্রতী হয়েছি। যতদিন আমার সামর্থ থাকবে, ততদিন এই কাজ করে যাব। শুধু খাবার দেওয়া নয়, পুজোয় নতুন জামা কাপড়ও বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসি।