কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
এ পর্যন্ত যা হিসেব, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি অনেকটাই। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে আমন ধান চাষ। কৃষি দপ্তর সূত্রে খবর, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোয়া করা গিয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি সামাল দিতে শস্যবিমায় জোর দেওয়া হয়েছে কৃষি দপ্তরের তরফে। ৩১ আগস্টের মধ্যে আমন ধানের জন্য শস্যবিমায় নাম নথিভুক্ত করার সময়। ফলে এনিয়ে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রচার চালানো হচ্ছে। এই শস্য বিমার জন্য কৃষককে কোনও প্রিমিয়াম দিতে হবে না। সবটাই দেবে রাজ্য সরকার।
মোটামুটি ১৫ আগস্টের মধ্যে আমন ধান রোয়ার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের বক্তব্য, আগস্টের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সপ্তাহেও যদি বৃষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়, তা হলে চাষের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা চিন্তা থাকবে না। চাষ মার খাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই মেটানো যাবে। তবে শেষমেশ যদি বৃষ্টির ঘাটতি থেকেই যায়, তা হলে বিকল্প চাষের পথে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। এনিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে জেলার কৃষি আধিকারিকদের। জেলায় জেলায় ঘুরে চাষাবাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। যেসব এলাকায় জলের অভাবে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে ডালশস্য, তৈলবীজ, বাদাম কিংবা হাইব্রিড ভুট্টা চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেক্ষেত্রে কৃষকদের বিকল্প চাষের বীজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাজীব নাথ জানিয়েছেন, যেখানে আমন ধান চাষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষক, সেখানে একেবারে সময় নষ্ট না করে মুগ কিংবা কলাই চাষ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ৪ কেজি বীজ লাগবে। বীজ শোধন করে ছড়িয়ে দিতে হবে। শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ৬ কেজি ইউরিয়া, ২৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ৭ কেজি পটাশ একসঙ্গে মিশিয়ে জমিতে দিতে হবে। চাষের ২৫-৩০ দিনের মাথায় বিঘা প্রতি চার ব্যারেল জলে নির্দিষ্ট মাত্রায় বোরণ মিশিয়ে প্রয়োগ করতে পারলে ভালো। ১৫ লিটার ব্যারেলে ৩০ গ্রাম মাত্রায় বোরন গুলতে হবে। চাষের ৪০-৪৫ দিনের মাথায় আরএক বার বোরন প্রয়োগ করা দরকার। সঙ্গে যাতে দানা পুষ্ট হয়, ফুল ঝরে না যায় সেজন্য প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম মাত্রায় চিলেটেড জিঙ্ক প্রয়োগ করা যেতে পারে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে কৃষকরা বিকল্প ফসল হিসেবে বাদাম চাষ করতে পারেন। বিঘায় বীজ লাগবে ১৩ কেজি। অবশ্যই বীজ শোধন করে নিতে হবে। সারা বছর ধরেই ভুট্টা চাষ করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শ্রাবণী দেবনাথ। তাঁর পরামর্শ, শুধু মাথায় রাখতে হবে জমিতে যেন জল দাঁড়িয়ে না যায়। তা হলে দু’দিনের মধ্যে সমস্ত ভুট্টা গাছ মারা যাবে। ফলে ভুট্টার জমিতে অবশ্যই জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো রাখতে হবে। লাইনে বুনতে হবে। জমিতে যেন বেশি গাছ না থাকে। বীজ শোধন করতে হবে। আগাছা দমন করা বিশেষ প্রয়োজন। ফল আর্মি ওয়ার্ম নিয়ে সজাগ থাকতে হবে।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথায় কোথায় বিকল্প চাষে জোর দেওয়া হবে, বৃষ্টির পরিস্থিতি দেখে ১৫ আগস্টের পর তা ঠিক করা হবে। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোয়া করা গিয়েছিল। তার পর কিছুটা বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি বদলায়। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার অবস্থা সবথেকে খারাপ।