সংবাদদাতা, মেখলিগঞ্জ: সাবেক ছিটমহল তার মূল ভূখণ্ড ফিরে পাবে কবে, তিনবিঘা দিবসের আগে ফের উঠছে প্রশ্ন। মাঝখানে একটা রাস্তা, এপার ভারত আর ওপারে বাংলাদেশ। এপারে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ, ওপারে বাংলাদেশের লালমণিরহাট। মাঝে বহুচর্চিত তিনবিঘা করিডর, যার অন্তর্গত পাটগ্রাম, দহগ্রাম ও আঙারপোঁতা গ্রাম। সব ছিটমহল হস্তান্তর হয়ে গেলেও দহগ্রাম-আঙারপোঁতার ভাগ্য বদলায়নি। দু’দেশের মাঝের ওই রাস্তা দিয়ে বিএসএফের নজরদারিতে বাসিন্দাদের নিত্যদিন যাতায়াত করতে হয়। রয়েছে একটি ‘যোগ’ চিহ্ন দেওয়া রাস্তা, যেখান দিয়ে দুই দেশেরই নাগরিকরা চলাচল করেন আর দু’পাশে পাহারায় থাকে বিএসএফ ও বিজিবি। এমনকী, এখান দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর জল ব্যবহার করেন উভয় দেশের নাগরিকরা। আসলে এই অঞ্চল ভারতেরই মালিকানাধীন। যদিও বাংলাদেশের পাটগ্রাম, যা সেদেশের সবচেয়ে বড় এনক্লেইভ, সেখানকার তিনবিঘা করিডর বা সাবেক ছিটমহলে বসবাসকারী ১৭ হাজার বাংলাদেশি অনেক বছর ধরে দাবি করে আসছেন, বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হোক ওই প্রান্তিক গ্রামগুলিকে। আন্দোলনের জন্য রয়েছে তিনবিঘা সংগ্রাম কমিটিও, যাতে তারা উন্নয়নমূলক পরিষেবা যেমন রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালোভাবে পেতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ভারত-বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেনি এই ভূখণ্ড। কারণ, তারজন্য দেশের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল।
১৯৮১ সালে এই হস্তান্তরের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে শহিদ হন সুধীর রায় নামে এক ব্যক্তি। পরে ১৯৯২ সালে ক্ষীতেন অধিকারী ও জীতেন রায় নামে আরও দু’জন একইভাবে আন্দোলন করতে গিয়ে শহিদ হন। প্রতি বছর ২৬ জুন এই শহিদ দিবস পালিত হয় তিনবিঘায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, মাল্যদান করে। তবে এখনও পর্যন্ত দাবিপূরণ হয়নি বাসিন্দাদের। প্রতিশ্রুতি মিললেও এখনও চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাননি শহিদদের পরিবারের সদস্যরা।
২০১১ সালে বাংলাদেশকে এই অংশটি ইজারা দেয় ভারত সরকার। দু’দেশের সরকারই নিজ নিজ অংশে কিছু কিছু উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করেছে। তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ, এখনও অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাঁরা। আর সবচেয়ে বড় কথা, তাঁরা সম্পূর্ণ নাগরিকত্ব পেতে চান। সেই লক্ষ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনজনের প্রাণ হারানোর ঘটনাকে স্মরণ করা হয় প্রতি বছর ২৬ জুন। লক্ষ্য কবে পূরণ হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।