নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশই এখন পাক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) ‘চারণক্ষেত্র’। এই পর্বে আইএসআই’কে যোগ্য সঙ্গত করছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)। ডিজিএফআই’এর সাহায্যেই আইএসআই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘ডেস্ক’ আর ঘুমিয়ে পড়া ‘ডিপ অ্যাসেট’দের সক্রিয় করেছে। চূড়ান্ত ভারত বিরোধিতাকে এজেন্ডা বানিয়ে একত্রে কাজ করছে এই দুই গোয়েন্দা সংস্থা। ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করিয়ে অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টির ছক, উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদত, বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনিং ক্যাম্পগুলিকে সচল করার মতো টাস্ক রয়েছে ওই এজেন্ডায়। সেই টাস্কেরই অঙ্গ হিসেবে কম্বোডিয়ায় ফোনম পেন এলাকায় সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত কারখানায় তৈরি মারণ বিস্ফোরক করাচি বন্দর থেকে জাহাজে চাপিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ‘সিসমিক ইমালসন এক্সপ্লোসিভ’ নামে কন্টেনার বোঝাই জিলোটিন স্টিকগুলি (ওয়াটারপ্রুফ) আইএসআই’এর ব্যবস্থাপনাতেই গত ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছয়। মারাত্মক এই বিস্ফোরক উত্তর-পূর্ব ভারতে নাশকতার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল, এমনই খবর পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এই বিস্ফোরক ব্যবহার করে বড় বড় নির্মাণ, ট্যানেল, সেতু অনায়াসে উড়িয়ে দেওয়া যাবে এবং বহু মানুষের মৃত্যুও নিশ্চিত করা যাবে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছে হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। গোয়েন্দা বলছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতে নাশকতার এই মিশনে মণিপুর, ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন আইএসআই-ডিজিএফআই’কে সাহায্য করার জন্য ‘চুক্তিবদ্ধ’ হয়েছে।
এপারের গোয়েন্দারা বলছেন, ইউনুস সরকার সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, ‘নয়া সখা’ পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আর কোনও প্রয়োজন নেই। চালানে যে পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে বলে লেখা থাকবে, তাই মানতে হবে। সেই নির্দেশের সুযোগ নিয়েই করাচি বন্দর থেকে পানামার জাহাজ ’এমভি উয়ান জিয়াং ফা জং’ খোলে সারের পাশাপাশি বিস্ফোরকের বেশ কয়েকটি কন্টেনারও বোঝাই করে নিয়ে আসে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম ইউনিট বন্দরে ঢোকার মুখে করাচি বন্দর থেকে আসা ওই জাহাজে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক বোঝাই আটক করে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, করাচি থেকে আসা জাহাজ আটকে দেওয়া হয়েছে, ক্ষুব্ধ আইএসআই কর্তাদের কাছ থেকে খবর পৌঁছে যায় ডিজিএফআই’এর সদর দপ্তর ঢাকার স্বাধীনতা সরণিতে। কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকার পর মুক্ত হয় বিস্ফোরক বোঝাই জাহাজ। কন্টেনার থেকে বিস্ফোরক বোঝাই ২৩ কেজি ওজনের বেশ কয়েকটি বাক্স সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ গোডাউনে। এপারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, গত ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দিয়ে রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার বেলাওয়ান পোর্টে পৌঁছেছে।