সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: একক গরিষ্ঠতা না পেয়েও নরেন্দ্র মোদি দাবি করছেন, তাঁরা সরকার প্রায় গড়েই ফেলেছেন। কিন্তু মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’ কি সত্যিই এত সহজে হাল ছেড়ে দিয়েছে? উত্তর হল—না। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ একদিকে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যয় হয়, তাহলে অন্যদিকে অবশ্যই রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক সম্মেলন। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পরই রাহুল ঘোষণা করলেন, ‘ভোটের ফলই বুঝিয়ে দিয়েছে, দেশের মানুষ মোদিজিকে চায় না।’ তারপরই তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘বিরোধী বেঞ্চে বসি বা সরকারে, ভারতের যে জনতা সংবিধান রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন, তাঁদের পাশেই থাকব।’ রাহুল গান্ধীর কথায় তো বটেই, ‘ইন্ডিয়া’র অন্য শরিকরাও ইঙ্গিত দিচ্ছেন, সরকার গড়ার জন্য শেষ পর্যন্ত যাবেন। নরেন্দ্র মোদি ২৭২ ছুঁতে পারেননি। তাই ‘নতুন বন্ধুর’ লক্ষ্যে ঝাঁপাচ্ছে বিরোধী মহাজোট। কংগ্রেসও নিজেদের ৯৯ আসন প্রাপ্তি নিয়ে আলাদা করে সন্তোষ দেখাচ্ছে না। তাদের লক্ষ্য ‘ইন্ডিয়া’র অঙ্ক। সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআই, আরজেডির মতো শরিকদের প্রাপ্ত আসন মিলিয়ে ম্যাজিক ফিগার হচ্ছে না। যদি চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমার যদি ‘ইন্ডিয়া’য় যোগ দেন, তখন খেলা শুরু হবে। আর সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে। আজ, বুধবার জোটের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এবং নতুন শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। রাত পর্যন্ত যা খবর, সব শরিকের প্রতিনিধিই বৈঠকে থাকবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর পক্ষ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
রাহুল গান্ধী এদিন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘সংবিধান অটুট রাখার যে লড়াই লড়ছি, সেটা চালিয়ে যাব।’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও জানান, ‘বিজেপির সঙ্গে আমাদের ইন্ডিয়ার সংখ্যার ফারাক কম। তাই নতুন শরিকদের দলে টেনে কীভাবে সরকার গড়তে পারি, সেই স্ট্র্যাটেজি থাকবেই।’
এদিনের ফল দেখিয়েছে, কংগ্রেসের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা, দল ভাঙানো, ইডি-সিবিআইয়ের ‘অপব্যবহার’, ইন্ডিয়ার শরিক দলের দুই মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পাঠানোর মতো হাজার চেষ্টা করেও রাহুলের উত্থান রুখতে ব্যর্থ মোদি। কংগ্রেস বলছে, মোদির দর্পচূর্ণ করেছেন রাহুল। দু’-দুবার ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ তো বটেই, এবারের শত আসনের সাফল্যর দাবিদার বলতে গেলে একা রাহুল। নিজে কেরলের ওয়েনাড় এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি, দু’টি আসনেই ব্যাপক ভোটের মার্জিনে জিতেছেন। একইসঙ্গে প্রমাণ করে দিয়েছেন, একক গরিষ্ঠতা না পেলেও সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের সমর্থন তাঁর সঙ্গে। আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটাই তাঁর পুঁজি। ইন্ডিয়ারও।