অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
মোদির টার্গেট ও উচ্চাশাকে যেমন দেশের প্রতিটি প্রান্তের ভারতবাসী উড়িয়ে দিয়েছে, তেমনই হাস্যকর ৪৮ ঘণ্টার বিনোদনে পরিণত হয়েছে এক্সিট পোল। হিন্দি বলয়ের পার্টির পরিচয় থেকে বেরিয়ে ভারতের মানচিত্র দখলের আগ্রাসী স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদি। বলা হয়েছিল দাক্ষিণাত্য জয় হবে এবার। সেরকম তো হলই না, উল্টে নিজেদের দুর্গ আর্যাবর্তের একের পর এক রাজ্যে ধাক্কা খেতে হয়েছে বিজেপিকে। রাজস্থান থেকে হরিয়ানা—সর্বত্র আসন হারিয়েছে মোদি বাহিনী। সবথেকে চমকপ্রদ ফল উত্তরপ্রদেশে। এই রাজ্যে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের জোট ম্যাজিক দেখিয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে যোগী-মোদি ডাবল ইঞ্জিনের মিথ।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি নামক দল লড়াই করেনি। করেছেন ব্যক্তি মোদি। সভা-সমাবেশে তাঁর ঘোষণাই ছিল—মোদিকে ভোট দিন, বিশ্বাস করুন মোদির গ্যারান্টিকে। তিনিই মুখ। তিনিই সেনাপতি। তিনিই ইস্যু ঠিক করেছেন। স্লোগানও বেঁধেছেন। অতএব এই পরাজয় মোদিরই। একঝাঁক আঞ্চলিক দলের মুখাপেক্ষী হয়ে নরেন্দ্র মোদি আগামী দিনে যদি মিলিজুলি সরকার গঠনও করেন, তার নাম আর ‘মোদি সরকার’ হচ্ছে না। হবে আক্ষরিক অর্থেই এনডিএ সরকার। ১০ বছরের মধ্যেই ব্র্যান্ড মোদি উধাও। সরকার গড়তে পারলে সর্বক্ষণ জোটশরিকদের দয়া-দাক্ষিণ্যের উপর নির্ভর করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে বর্ণনা করেছেন ক্রাচ নিয়ে চলার সঙ্গে। এনডিএ সরকারের দুই ক্রাচ হতে চলেছে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম। এই দুই দলের সমর্থন ছাড়া নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য তৃতীয় সরকার পঙ্গু। এরই মধ্যে কিন্তু বিজেপির সংসারে গোপনে হানা দেওয়া শুরু হয়েছে। নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করছে ‘ইন্ডিয়া’। গরিষ্ঠতা হাইজ্যাক হয়ে সরকার হাতছাড়া হওয়ার আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার দুপুরে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারকে ফোন করে প্রায় আকুল হয়ে তাঁদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। কারণ তাঁরা জানেন, যে কোনও সময় পটপরিবর্তন হতে পারে। ইতিমধ্যেই চন্দ্রবাবুকে নাইডুকে বার্তা পাঠানো হয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশকে ইন্ডিয়া জোট সরকার বিশেষ প্যাকেজ ও স্পেশাল রাজ্যের স্টেটাস দেবে। আবার নীতীশ কুমারকে দেওয়া হচ্ছে উপ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অফার। এই দুই দলের কাছে রয়েছে ৩১টি আসন, যা এনডিএ এবং ইন্ডিয়া দুই শিবিরের কাছেই মহামূল্যবান।
যে বিজেপি একা ৩৭০ আসন পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল, তারা আড়াইশো আসনও ছুঁতে পারল না কেন? কারণ, বিরোধীদের টিম গেম। বেশ কিছু রাজ্যে বিজেপির থেকে আসন কেড়ে নিয়ে ১০ বছর খরার পর ১০০ স্পর্শ করেছে কংগ্রেস। যেখানে যে শক্তিশালী—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ফর্মুলায় গেরুয়া অহঙ্কার ধুলিসাৎ করে দিয়েছে আঞ্চলিক দলগুলি। নিখুঁত মহাজোট করে মহারাষ্ট্রে বিজেপির দল-ভাঙা পলিটিক্স মহাধাক্কা খেয়েছে উদ্ধব থ্যাকারে, শারদ পাওয়ার ও কংগ্রেসের কাছে। আবার তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল হয়েছে চারটি দলের। তারা এনডিএতে না থেকেও ২০১৪ থেকে বিজেপির শ্যাডো শরিকের কাজ চালিয়ে গিয়েছে সংসদে। সেই জগন্মোহন রেড্ডি, মায়াবতী, কে চন্দ্রশেখর রাও এবং নবীন পট্টনায়েকরা ভারতীয় রাজনীতি থেকে প্রায় মুছে গিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদির প্রাপ্তি কমবেশি ২৪০ আসন। এতকাল যাঁকে তিনি ব্যঙ্গ করতেন, সেই ডক্টর মনমোহন সিং ২০০৯ সালে পেয়েছিলেন ২০৬। নিয়তির পরিহাস। মোদিকে আগামী দিনে মনমোহন সিং হতে হবে। দুর্বল সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়ে শিখতে হবে জোট রাজনীতির ধর্ম। ২০ বছর পর কেন্দ্রে ফের ফিরছে একক দলের গরিষ্ঠতাহীন জোট সরকার! মোদির নেহরু হওয়া হল না। মোদির রাজীব গান্ধীও হওয়া হল না।