শরীর-স্বাস্থ্যের আকস্মিক অবনতি। বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ, ব্যবসায় নতুন সুযোগ ... বিশদ
ঐতিহাসিকভাবে এর্নাকুলামে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের পাল্লা চিরকালই ভারী থাকে। উপ-নির্বাচন মিলিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্রে মোট ১৮ বার ভোট হয়েছে। ইউডিএফ শিবির জয়ী হয়েছে তার মধ্যে ১৩ বার। পাঁচবার এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ শিবির। তবে এবার দুই শিবিরের চিরকালীন লড়াইয়ের পাশাপাশি কাজ করছে তৃতীয় একটি ফ্যাক্টর। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আলফোন্স কন্ননথানাম। বর্তমানে কেরল থেকে বিজেপির সর্বভারতীয় মুখ তিনিই।
গতবার এর্নাকুলাম থেকে জয়ী হয়েছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কে ভি টমাস। কিন্তু এবার এই প্রবীণ নেতার পরিবর্তে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে তরুণ তুর্কি হিবি ইডেনকে। তিনি আবার এর্নাকুলামের বিধায়কও। গত বছর বন্যার সময় দিন রাত এক করে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ছবি এই অঞ্চলে ইডেনকে জনপ্রিয় নেতা করে তুলেছে। ইডেনকে টেক্কা দিতে এলডিএফ বাজি ধরেছে পি রাজীবকে। তিনি সিপিএমের প্রার্থী। সিপিএমের জেলা সম্পাদকও। ইউডিএফ শিবিরে যদি এই এলাকার বন্যার মুখ হন ইডেন, তবে এলডিএফ শিবিরে রাজীবও তাই।
বন্যার ভয়াবহ স্মৃতি এখনও ধূসর হয়নি। তারই মধ্যে এর্নাকুলামে এবার একটাই প্রশ্ন। কংগ্রেসের এই খাসতালুকে সিপিএমকে কি দলীয় প্রতীকে রাজীবকে জিতিয়ে আনতে পারবে? কারণ দলীয় প্রতীকে একবারই এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন কোনও সিপিএম প্রার্থী। সেটা সেই ১৯৬৭ সালে। জয়ী হয়েছিলেন ভি বিশ্বনাথ মেনন। বাকি চারবারের জয় বলতে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে সমর্থনের মাধ্যমে জিতিয়ে আনা। দলীয় প্রতীকে দাঁড়িয়ে তুলনায় ভালো ফল করেছিলেন সিন্ধু জয়। ২০০৯ সালে তিনি কংগ্রেস নেতা কে ভি টমাসের কাছে মাত্র ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে হেরেছিলেন। এর্নাকুলামের সিপিএম জেলা সম্পাদক রাজীবও এবার দলীয় প্রতীকেই লড়ছেন। অন্যদিকে হিবি ইনেডের মতো তরুণ তুর্কিকে কংগ্রেস প্রার্থী করায় রীতিমতো চাঙ্গা এই কেন্দ্রের ইউডিএফ কর্মীরা। মাত্র ৩৬ বছর বয়সি ইডেন এর্নাকুলামের দু’বারের বিধায়ক। সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ছবি ইডেনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য ১০০টি বাড়ি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন কংগ্রেসের এই তরুণ মুখ। দলীয় নেতা-কর্মীরা স্বীকার করছেন, বন্যার সময় এর্নাকুলামের সর্বত্র ছুটে বেড়িয়েছেন ইডেন। অল্প বয়সিদের পাশাপাশি প্রবীণদের কাছেও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি। কে ভি টমাসের জায়গায় এর্নাকুলাম থেকে লোকসভা ভোটের টিকিট এমনি এমনি জোটেনি ইডেনের। গতবারও এই কেন্দ্র থেকে টমাস এলডিএফ সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজকে ৮৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন।
এবার সিপিএম এই কেন্দ্র থেকে ফের দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। দলের জেলা সম্পাদক রাজীবেরও সামাজিক স্তরে যোগাযোগ ভালো। বন্যার সময় তিনিও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রহ এলাকাগুলিতে ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ চালিয়েছেন। রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে রাজীবের ট্র্যাক রেকর্ডকেও ভোটের প্রচারে কাজে লাগাচ্ছে এলডিএফ শিবির। আর ইউডিএফ ও এলডিএফ শিবিরের চিরকালীন লড়ায়ের মধ্যে এবার এই কেন্দ্রে নিশ্চিতভাবেই তৃতীয় ফ্যাক্টর বিজেপি প্রার্থী আলফোন্স। বর্তমানে কেন্দ্রের মন্ত্রী। বাম সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মার্জিত এই প্রাক্তন সিভিল সার্ভিস অফিসার। পরে বিজেপিতে যোগদান। বিজেপি জেলা সভাপতি এন কে মোহনদাসের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে প্রচুর কাজ করেছেন আলফোন্স। তিনি একবার যেটা ভেবে নেন, তা করেই ছাড়েন।
এমনিতে তিন প্রার্থীই এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের পক্ষে সওয়াল করছেন। মেট্রো প্রকল্প সম্প্রসারণের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছেন। পরিকাঠামোর উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের শ্রীবৃদ্ধি থেকে ইনফোপার্কে আরও নতুন নতুন সফটওয়্যার সংস্থাকে আমন্ত্রণের পক্ষে সওয়াল করছেন। উপকূলীয় এলাকার উন্নতির কথাও বলছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের চর্চা, কংগ্রেসের খাসতালুকে সিপিএমকে কি দলীয় প্রতীকে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে পারবে? পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী হিসেবে আলফোন্স কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন, সেই আলোচনাও তুঙ্গে।