নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: একটানা চারবার। দমদমের বুকে রেকর্ড গড়লেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। শুধু তাই নয়, ত্রিপাক্ষিক লড়াইয়ে টপকে গেলেন গতবারের মার্জিনও। আর সকাল থেকেই টানটান প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহে মার্জিন যত বেড়েছে দমদম লোকসভা এলাকার অলিগলি সবুজ আবিরে ভেসে গিয়েছে। বারবার আওয়াজ উঠেছে ‘জয় বাংলা’ যত সময় গড়িয়েছে, গণনাকেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল কর্মীদের ভিড় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। ‘খেলা হবে’, ‘জনগণের গর্জন বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন’ গানের তালে ভেসে গিয়েছে উৎসাহী তৃণমূল কর্মীরা। রাতের বৃষ্টিও তাঁদের উৎসাহে ভাটা ফেলতে পারেনি। ডিজে গানে রাতভর উল্লাসে ভেসে গিয়েছেন শাসক দলের নেতা-কর্মীরা।
এদিন সকালে গণনা শুরু হওয়ার পর বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তের সঙ্গে সৌগত রায়ের লড়াই ছিল শেয়ানে-শেয়ানে। প্রথম দিকে সামান্য এগিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেইসময় গেরুয়া শিবিরের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতোই। কিন্তু রাউন্ড যত বেড়েছে এগিয়ে যাওয়া সৌগতর জয়ের ব্যবধান বেড়েছে ততই। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সৌগত তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শীলভদ্রকে পরাজিত করেছেন ৭০ হাজার ১৫১ ভোটের ব্যবধানে। সৌগত পেয়েছেন ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৪৫৫ ভোট। শীলভদ্রের সংগ্রহ ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৫৬ ভোট। অন্যদিকে, সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী পেয়েছেন ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৫ ভোট। প্রসঙ্গত, দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে এর আগে ভারতীয় লোকদল, সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা জয়ী হন। কাউকেই একেবারে শূন্য হাতে ফেরাননি দমদমের বাসিন্দারা। তবে এর আগে ১৯৮৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পরপর তিনবার জেতেন সিপিএম প্রার্থী নির্মলকান্তি চট্টোপাধ্যায়। সৌগতও ২০০৯ সাল থেকে পরপর তিনবার জেতেন। এবার চতুর্থবার জিতে তিনি দমদমের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস গড়লেন। এদিন গণনা কেন্দ্রে আসেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তাঁরা সৌগতকে শুভেচ্ছা জানান।
এদিন সাতসকালে গণনা কেন্দ্রে পৌঁছে যান সৌগত রায়। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে তিনি গণনা কেন্দ্রের কলেজে বিশ্রাম কক্ষে চলে যান। সেখান থেকেই ফলাফলের উপর নজর রাখছিলেন তিনি। এদিন ফলাফল প্রকাশ্যে আসার পর সৌগত বলেন, ‘এই জয় মানুষের। কুৎসা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মানুষের রায়। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারসহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানান জনমুখী প্রকল্পের জয়। এ থেকে বিজেপির শিক্ষা নেওয়া উচিত। তাদের বোঝা উচিত, কুৎসা ও এজেন্সির ভয় দেখিয়ে মানুষের মন জয় করা যায় না।’ 
অন্যদিকে, গণনা শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই, পরিণতি বুঝে বেরিয়ে যান শীলভদ্র। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাননি তিনি। তবে বিজেপি নেতা কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন,  ‘সিপিএমের কাঁধে ভর দিয়েই জিতেছেন সৌগত। দমদমের বেশিরভাগ মানুষ তাঁকে প্রত্যাখান করেছে। বিপুল সংখ্যায় বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না-হলে এই কেন্দ্রে আমরাই জিততাম।’ 
সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী সকালে কিছুক্ষণ গণনাকেন্দ্রে ছিলেন। তবে ফলাফলের ট্রেন্ড দেখেই বেরিয়ে যান তিনিও। সুজন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে করছি, আমরা হেরেছি মেরুকরণের রাজনীতির কাছে।’  নিজস্ব চিত্র