সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: বহু প্রতীক্ষিত ধর্ম সংসদ এবং তার মঞ্চ কুম্ভমেলা। আর এখান থেকেই দু’টি দাবি গ্রহণ করা হল। সর্বসম্মতভাবে। প্রথমত, সনাতন বোর্ড গঠন করতে হবে। এই সনাতন বোর্ড যেন কোনওভাবেই সরকারি আয়ত্তাধীন না হয়। দ্বিতীয়ত, বোর্ডের আওতায় থাকবে সনাতন ধর্মাবলম্বী তাবৎ মন্দির, আশ্রম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। সেইসব প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরের পরিচালক যারা অথবা যে ট্রাস্টি বোর্ড, তাদেরই থাকবে একচ্ছত্র অধিকার ও নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা। অর্থাৎ, মন্দিরের উপর সবরকম সরকারি হস্তক্ষেপ প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু তীর্থক্ষেত্রে অবস্থিত বিখ্যাত মন্দিরগুলির পরিচালন পর্ষদে সরকারি হস্তক্ষেপ একটি স্বাভাবিক প্রথা। পুরী থেকে তিরুপতি। চারধাম অথবা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই পরিচালন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্দির কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গঠিত কমিটি, অছি পরিষদ কিংবা পরিচালন সমিতি থাকে। কিন্তু সেই সবগুলিতে পরোক্ষে হলেও উপস্থিত থাকেন সরকারি প্রতিনিধি। কোথাও জেলাশাসক, কোথাও রাজ্যের মন্ত্রী। আবার কোথাও বিধায়ক-এমপিদের আড়ালে রাজনৈতিক দল। সুতরাং সনাতনী মন্দির ও প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি আজও। নীতি নির্ধারণে ভূমিকা নেই দেশের সন্ত, মোহন্ত, ধর্মীয় সংগঠন কিংবা পরিষদের। সোমবার প্রয়াগরাজে আয়োজিত ধর্মসংসদের প্রথম দিনে সনাতন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর খসড়া জমা দেওয়া হবে কেন্দ্র ও সব রাজ্য সরকারকে। একইভাবে পৃথক প্রস্তাবে থাকবে মন্দিরকে সরকারি প্রভাবমুক্ত করার প্রস্তাব।
সর্বসম্মত সনাতনী সংসদ। যদিও শুরুতেই বিপত্তি। কারণ, দশনামী সম্প্রদায়ের বেশ কিছু আখড়ার প্রধানরাই গরহাজির! এমনকী আক্রমণ-প্রতি আক্রমণও হয়েছে লাগাতার। ধর্ম সংসদের আহ্বায়ক দেবকীনন্দন ঠাকুর মহারাজ সনাতন বোর্ডের সভাপতি হতে চান—এই মর্মে তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে। দেবকীনন্দন মহারাজ এদিন ধর্ম সংসদে বলেন, ‘আমার পদের কোনও লোভ নেই। জগৎগুরু শঙ্করাচার্যরা থাকবেন সর্বোচ্চ নেতৃত্বে। অখিল ভারত আখড়া পরিষদ, ধর্মপীঠ এবং বৈষ্ণব পরিষদের মোহন্তরাও থাকবেন সনাতন বোর্ডে। সরকারের নেতৃত্ব চাই না।’ সংসদে গৃহীত প্রস্তাব—বৈদিক ধর্ম এবং সংস্কৃতিই হবে ভারতের চালিকাশক্তি। সনাতন বোর্ডে তাঁদেরই স্থান হবে, যাঁদের বৈদিক ধর্মে আস্থা রয়েছে। বলা হয়েছে, শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে থাকা মন্দির অথবা লুপ্ত হয়ে যাওয়া মন্দিরের জমি যদি সনাতনীদের অধীনে না থাকে, তা পুনরুদ্ধার করা হবে। কেমন হবে সনাতন বোর্ড? গৃহীত রূপরেখায় বলা হয়েছে, বোর্ডে থাকবে কেন্দ্রীয় অধ্যক্ষ মণ্ডল, সংরক্ষণ মণ্ডল, সহযোগী মণ্ডল, পরামর্শদাতা মণ্ডল এবং সদস্য। এই প্রস্তাব ও ব্লু-প্রিন্টই তুলে দেওয়া হবে ভারত সরকারের হাতে। যত দ্রুত সম্ভব সনাতন বোর্ড গঠন করে সেটির আইনি ও সাংবিধানিক মান্যতা দাবি করা হচ্ছে। জ্যোতিষপীঠ শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তানন্দ সরস্বতী মহারাজ বলেছেন, ‘সনাতন বোর্ড গঠন করে ভারতে সনাতনী সংস্কৃতির পুনঃপ্রবর্তন করার পথে এগতে হবে। ১৩টি আখড়া ও পরিষদ নিয়ে গঠিত হবে নতুন বোর্ড।’
একদিকে দিল্লিতে ওয়াকফ বোর্ড বিল যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দ্রুত ১৪টি সংশোধনী গ্রহণ এবং সেই সংশোধিত বিল সংসদে পেশের প্রক্রিয়া শুরু হল। অর্থাৎ, বিরোধীদের দাবি না মেনে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। আর অন্যদিকে, সনাতন বোর্ড গঠনেও বাড়তি উদ্যোগ! ২০২৪ সালে সমাপ্ত হয়েছিল রামমন্দির ইস্যু। ২০২৫ সালে শুরু হল সনাতনী বোর্ড গঠনের নতুন এজেন্ডা। প্রকৃত এজেন্ডার নাম কী? হিন্দুরাষ্ট্র?
পূর্ণকুম্ভে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।