নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: দিল্লির ভোটে জিততে ‘জল সন্ত্রাস’ চালাচ্ছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করছে শাসক দল আপ। আর নির্বাচনের যখন মাত্রই এক সপ্তাহ বাকি, তখন জল দূষণ সংক্রান্ত অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে রীতিমতো তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লির ভোট রাজনীতি। আপের জনপ্রিয়তায় আদতে ভয় পেয়েছে বিজেপি। তাই জলে ‘বিষ’ মিশিয়ে মানুষ মারার রাজনীতি শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করছেন সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশীর। তাঁদের দাবি, হরিয়ানা সরকার দিল্লিকে যে জল দেয়, সেই জলে স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অন্তত ছ’গুণ বেশি অ্যামোনিয়া মিশে রয়েছে। সেই জল পান করলে এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছে কেজরিওয়ালের দল। এদিন আতিশী এবং ভগবন্ত মান কমিশনে গিয়েছেন জল দূষণ ইস্যুতে।
সোমবারই আপের অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি। এবার কেজরিওয়ালের মোকাবিলায় দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ময়দানে নামিয়ে দিল বিজেপি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং ভূপেন্দ্র যাদব। কমিশনে তাঁরা আর্জি জানান, অবিলম্বে আপ সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে। ভ্রান্ত কথা বলে তিনি ভয় দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে। এর আগে হরিয়ানার বিজেপি সাংসদরাও আপ সুপ্রিমো কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারির দাবি করেন। তাঁদের অভিযোগ, ভোটে ফায়দা তুলতে ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে হরিয়ানার মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পাল্টা কেজরিওয়াল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছেন, আমাকে ইতিমধ্যেই জেলে পুরেছে বিজেপি। এবার বরং সোজা ফাঁসি দিয়ে দিক। 
বিজেপির মোকাবিলায় ‘ক্রাউড ফান্ডিং’য়ের মাধ্যমে টাকা তুলতে মরিয়া আপ। ভোট এগিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নির্বাচনী খরচ। আপনারা সাহায্য না করলে আমাদের কোনও গতি নেই। আপনার সুবিধেমতো কন্ট্রিবিউট করুন আমার অ্যাকাউন্টে। আমায় ভোটে না জেতালে গ্রেটার কৈলাসে এমন স্বচ্ছ রাজনীতি হবে না। সরকারি কাজ বিনা বাধায় দুর্নীতিহীনভাবে বাস্তবায়িতও হবে না। ভোটের দিনসাতেক আগে এমনই অভিনব উপায়ে প্রচারে নেমেছেন আপ সরকারের মন্ত্রী তথা গ্রেটার কৈলাস বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সৌরভ ভরদ্বাজ। শুধুমাত্র ডোনেশন চেয়ে আবেদনই নয়। অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে সেই কন্ট্রিবিউশন দেবেন দিল্লির মানুষ, তাও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে কিউআর কোড কিংবা অনলাইন পেমেন্টের লিঙ্কও! 
মন্ত্রীর কার্যালয়ের দাবি, দলই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের পথেও হাঁটা হবে নির্বাচনে। সেইমতোই আর্জি জানানো হচ্ছে। সার্বিক বিষয়েই অবশ্য কার্যত ম্যাচ রেফারির ভূমিকা নিয়েছে দিল্লি ভোটের অন্যতম কুশীলব কংগ্রেস। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিজেপি এবং আপ - দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছে তারা। আর্জি জানিয়েছে, ‘জল সন্ত্রাসে’র অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তাহলে বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্যথায় আপের বিরুদ্ধে। দেশের ক্ষুদ্র শহর দিল্লির ভোটরঙ্গ আপাতত ‘বিষ’ জলেই মজেছে!