নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: পরপর উৎসব। বড়দিন, বর্ষবরণ ও সাধারণতন্ত্র দিবস। সংশ্লিষ্ট উৎসবে জঙ্গি নাশকতার শঙ্কা ‘চিকেন নেক’ শিলিগুড়িতে! মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আনসারুল্লা বাংলা টিমের দুই সদস্য গ্রেপ্তারের পর এমন আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। এজন্যই ‘চিকেন নেকের’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিস। তারা এখানে ‘অ্যান্টি সাবোতাজ স্কোয়াড’ নামিয়েছে। মেটাল ডিটেক্টর, স্ক্যানার, স্নিফার ডগ প্রভৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্কোয়াড সুসজ্জিত। একই সঙ্গে মহকুমার আন্তর্জাতিক সীমান্ত, আন্তঃরাজ্য ও জেলা সীমানা, বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
শিলিগুড়ি পুলিস কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, জঙ্গি কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমনে শহরে পুলিস সতর্ক রয়েছে। অ্যান্টি সাবোতাজ স্কোয়াড নামানোর পাশাপাশি সিসি ক্যামেরায় নজরদারি এবং শহরের প্রবেশ ও বাহিরপথে নাকা তল্লাশি চলছে। পর্যটকদের যাতে সমস্যা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। দার্জিলিং জেলা পুলিসের এক অফিসার বলেন, নেপাল ও বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিএসএফ ও এসএসবির সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে সক্রিয় হয়েছে ভারত বিরোধী শক্তি। ইতিমধ্যে পদ্মাপাড়ের কট্টরপন্থীরা কখনও কলকাতা, কখনও উত্তর-পূর্ব ভারত, আবার কখনও বাংলা, বিহার ও ওড়িশা নিয়ে অখণ্ড বাংলাদেশ বানানোর হুমকি দিয়েছে। এজন্য পদ্মাপাড়ের জেহাদি জঙ্গি ও মৌলবাদী সংগঠনের টার্গেট ‘চিকেন নেক’। এখানে জঙ্গিরা নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা। মুর্শিদাবাদ, অসম ও কেরল থেকে আনসারুল্লা বাংলা টিমের আট সদস্য গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে পুলিস ও গোয়েন্দারা। বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ ও সাধারণতন্ত্র দিবসের মুখে এমন তথ্য মেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি জমজমাট শহর। পাহাড় এবং সমতলের বিভিন্ন জেলা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে প্রতিদিন ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও পড়াশোনা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। বড়দিন, ইংরেজি বর্ষবরণ, সাধারণতন্ত্র দিবস প্রভৃতি উৎসবের সময় এখানে লোকসমাগম আরও বাড়ে। আশপাশের জেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং বিদেশ থেকেও পর্যটকরা এখানে আসেন। তাঁদের সুরক্ষা দিতে পুলিস সতর্ক রয়েছে। হিলকার্ট রোড, হংকং মার্কেট, বিধান মার্কেট, তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস, এনজেপি এবং শিলিগুড়ি জংশন রেল স্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে মেটাল ডিটেক্টর হাতে তল্লাশি চালাচ্ছে সাদা পোশাকের পুলিস। পুলিসের এক অফিসার বলেন, ৬০০ সিসি ক্যামেরায় নজরদারি, নাকা তল্লাশি, অ্যান্টি সাবোতাজ টিমের অভিযান চলছে। স্টেশনে স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রেল পুলিস।
উত্তরবঙ্গ তো বটেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির মধ্যে বাণিজ্যনগরী শিলিগুড়ি অন্যতম। মহানন্দা ও তিস্তা নদীর মাঝে অবস্থিত এই শহরের পাশেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান। এখান থেকে প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও সিকিমের দূরত্বও বেশি নয়। এই শহর উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। কাজেই, ভৌগলিক দিক থেকে এখানকার গুরুত্ব অপরিসীম। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে এই শহরকে বিচ্ছিন্ন করাই বাংলাদেশি জঙ্গিদের টার্গেট। কারণ, ভারতকে দুর্বল ও অশান্ত করাই ওদের উদ্দেশ্য।