বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ২০১৯ থেকে ২২—এই তিন বছর মানুষের রোজকার কথাবার্তার অংশ হয়ে গিয়েছিল করোনা ও করোনার টিকা। সেই প্রসঙ্গে উঠে আসত একটি নাম—‘কো-উইন অ্যাপ’। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীদের আড্ডা হোক বা সিরিয়াস আলোচনা—বারবার ঘুরেফিরে আসত কিছু প্রশ্ন। ‘নাম রেজিস্টার করেছিস তো অ্যাপে?’, ‘কোথায় নিচ্ছিস টিকা?’, ‘বাড়ির কাছে পড়েছে তো?’ ‘সেকেন্ড ডোজ কবে?’ ‘অ্যাপে আধার নম্বর চাইল’, ‘হাসপাতাল নাকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে?’, ‘খালি পেটে ইঞ্জেকশন নেওয়া যায়?’, ‘লাইনে কত নম্বরে ছিলিস?’, ‘করোনা হওয়ার কতদিন পর ইঞ্জেকশন নেওয়া যাবে’—এমন হাজারও একটা প্রশ্ন। করোনা এবং কো-উইনকে ভুলতে না পারা দেশবাসীর জন্য এবার বড় চমক! ‘ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম’ বা জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একই ধাঁচে তৈরি নতুন অ্যাপ ইউ-উইনকে। ২০২৫ সাল থেকে বাংলাতেও এই কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পরিবার কল্যাণ আধিকারিক ডাঃ অসীম দাস মালাকার। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় আমরা দেখেছি, কো-উইন অ্যাপের বেশ কিছু সুবিধা আছে। রুটিন টিকাকরণের সময় এই ধাঁচের অ্যাপ ব্যবহার হলে ওই সুযোগ-সুবিধাগুলি এক্ষেত্রেও মিলবে।’
কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা? বাড়ির কাছে পছন্দমতো জায়গায় মা ও বাচ্চার টিকা নেওয়ার সুযোগ মিলবে। কবে টিকা নিতে হবে, সেই এসএমএস চলে যাবে মোবাইলে। টিকাকরণ সম্পূর্ণ হলে অনলাইনেই ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে সার্টিফিকেট। টিকার দিনক্ষণ ভুলে গেলেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। অ্যাপই ব্যবহারকারীর মোবাইলে সেই তথ্য পাঠিয়ে দেবে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি বছর বাংলার প্রায় ১৪ লক্ষ শিশু সরকারি টিকাকরণের সুবিধা পায়। বছরে পাঁচবার তাদের টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। অ্যাপ ব্যবহার করে টিকাদান প্রক্রিয়া চালু হলে গোটা বিষয়টি আরও গোছানো এবং ব্যবহারকারীর পক্ষে সুবিধাজনক হবে।’ স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, প্রধানত মা ও শিশুর টিকাকরণের ক্ষেত্রে এই অ্যাপকে কাজে লাগানো হবে। প্রসঙ্গত, সরকারিভাবে এখন বাচ্চাদের ১২টির বেশি টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সেগুলি হল পোলিও বা ওপিভি (একাধিক ডোজ), বিসিজি, হেপাটাইটিস বি, রোটা ভাইরাস (একাধিক ডোজ), পেন্টাভ্যালেন্ট (একাধিক ডোজ), আইপিভি (একাধিক ডোজ), পিসিভি (একাধিক ডোজ), ডিটি (একাধিক ডোজ), এমআর (একাধিক ডোজ), ডিপিটি (একাধিক ডোজ), জাপানিজ এনসেফেলাইটিস এবং ভিটামিন ডি। এগুলি সবই জন্ম থেকে বিভিন্ন বয়সে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের দেওয়া হয়। গর্ভবতী মায়েদেরও টিটেনাস-ডিপথেরিয়া বা টিডি টিকা দেওয়া আবশ্যিক।