কাজল মণ্ডল, ইসলামপুর: অধিক সাশ্রয়, অধিক লাভের জন্য ধান রোয়া করতে যন্ত্রের ব্যবহারে চাষিদের উৎসাহিত করছে উত্তর দিনাজপুর জেলা কৃষিদপ্তর। কিছু ব্লকে কৃষিদপ্তরের খামারে যন্ত্রের ব্যবহার করে চাষিদের দেখানো হচ্ছে। প্রদর্শনী ক্ষেত্রও করা হচ্ছে। আবার চাষিদের জমিতে সরাসরি রোয়া করা হচ্ছে। কৃষিদপ্তরের দাবি, নতুন এই পদ্ধতিতে খরচ কম হবে। এর ব্যবহারে চাষিরা লাভবান হবেন। চাষিরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি নতুন। জেলা কৃষিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকেই চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। জমিতে চাষ করে দেখানো হচ্ছে। ইসলামপুর ব্লক কৃষি আধিকারিক দীপ সিংহ বলেন, গাইসাল ২ নম্বর পঞ্চায়েতের কালানাগিন গ্রামে তিন জন চাষির এক বিঘা করে মোট তিন বিঘা জমিতে যন্ত্রের সাহায্যে রোয়া করা হয়েছে। করণদিঘি ব্লকের কৃষি আধিকারিক কৌশিক নাগ বলেন, প্রথমে আমরা করণদিঘিতে দপ্তরের খামারের জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষ করেছি। পরে কয়েকটি জায়গায় ১০ জন চাষির ১০ একর জমিতে একটি ফার্মার্স ক্লাব ও আতমা প্রকল্পের সহায়তায় চাষ করা হয়েছে। চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এখনও চাষিদের মধ্যে যেহেতু যন্ত্রটি নেই তাই বলা হয়েছে আমাদের দপ্তরে আবেদন করলে দপ্তরের যন্ত্র দিয়ে রোয়া করার ব্যবস্থা করা হবে। এই যন্ত্রের ব্যবহারে চাষের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
কৃষিদপ্তর জানিয়েছে, ধান রোয়া করার জন্য তিন-চার সপ্তাহ সময় পাওয়া যায়। এই সময়ের মধ্যেই রোয়া সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু রোয়া করার কাজ অত্যন্ত পরিশ্রমের এবং দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট সময়ে এই কাজ শেষ করা চাষিদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তাই যন্ত্রের মাধ্যমে রোয়া করা হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। শক্তিচালিত ধান রোয়া যন্ত্র দুই ধরনের হয়। হেঁটে চালানো ও যন্ত্রের উপর বসে চালানো। যন্ত্রের ট্রান্সপ্লান্টিং ডিভাইসের মাধ্যমে সিডলিং ট্রে যা চারাগুলিকে আঙুলের মতো ধরে মাটিতে পুঁতে দেয়। হেঁটে চালানো যন্ত্র একসঙ্গে চার বা ছয় সারি রোয়া করতে পারে। এবং বসে চালানো যন্ত্রে ছয় বা আট সারি রোয়া করা সম্ভব। যন্ত্রের ব্যবহারে প্রতিটি সারি নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকে। সারিতে গুছির দূরত্বও নির্দিষ্ট হয়। চারা রোপণের গভীরতা কমানো এবং বাড়ানো সম্ভব। যন্ত্রের ব্যাবহার করতে চাইলে একদিন আগেই জমি কাদা করা প্রয়োজন। রোয়া করার ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চারা বসে গিয়ে জমি নতুন চেহারা পায়। এর ব্যবহারে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে রোয়ার কাজ করা যায়। দিনে ১ থেকে ২ হেক্টর জমি রোয়া করা সম্ভব। কম শ্রমিক ও সময়ে রোয়া করা সম্ভব। এতে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ চারা কম লাগে। প্রচলিত পদ্ধতির চাইতে ২০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। তবে এজন্য পলিথিন ম্যাটে বা ট্রেেত বীজতলা তৈরি করা প্রয়োজন।