কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কারও শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার— ... বিশদ
আপনার কথায় একটা প্রসঙ্গ বারবার উঠে আসে, এটা বোধহয় আপনার শেষ ছবি বা আপনি হয়তো আর ছবি করবেন না। এতটা নৈরাশ্যবাদ কেন?
এটা নৈরাশ্যবাদ নয়। আমি সিনেমা নিশ্চয়ই করব। হয়তো সিনেমা হলের জন্য ছবি করব না। এখানকার যা সিস্টেম, আপনি ছবি তৈরি করে উপযুক্ত জায়গায় দেখাতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ছবিকে তো কমপক্ষে সপ্তাহ দুয়েক সময় দিতে হবে। দর্শকের ভালো না খারাপ লাগল সেটা বোঝার আগেই ছবিটা চলে যায়। সেই কারণে হলের জন্য ছবি তৈরি করে লাভ নেই। সিনেমা হলে রিলিজ করা নিয়ে, ডিস্ট্রিবিউশনেও অনেক সমস্যা আছে। আমি এখনই বিশদে যাচ্ছি না। ধরুন আমি দু-আড়াই বছর ধরে ছবিটা তৈরি করলাম। হলে চালাতে গেলে যে পরিমাণ প্রচার এবং মার্কেটিং দরকার, সেটা প্রায় সিনেমা মেকিংয়ের কাছাকাছি। সিনেমা তো তার নিজের জোরে চলবে। আসলে আপনার ছবিটা কতটা ভালো তার বিচার হবে, আপনার ছবির মার্কেটিং কতটা ভালো, তা দিয়ে। তাই ভবিষ্যতে প্রেক্ষাগৃহের জন্য ছবি করব কিনা সেটা ভাবতে হবে।
তথাকথিত বড় প্রযোজনা সংস্থা তো এখন ছবির প্রচার নিয়েই বেশি মাথা ঘামাচ্ছে?
লোকের মনে হয় এখন ছবির গুণমান নির্ভর করে মার্কেটিংয়ের উপরে। সেভাবেই ধারণা তৈরি করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি যে আমার ওই সিদ্ধান্তে অনড় তা নয়, হয়তো ছবি করব।
তাহলে সেই মার্কেটিংয়ের পথে আপনি হাঁটছেন না কেন?
প্রচুর টাকা লাগে। সব প্রযোজকদের তো সেই ক্ষমতা থাকে না। এখন যেহেতু অনলাইনের যুগ, তাই লোকের কাছে পৌঁছনোর রাস্তাও অনেক। হয়তো দেওয়ালে পোস্টারের থেকেও বেশি পৌঁছনো যায়।
কখনও বড় প্রযোজকদের কাছে যাননি?
না।
কেন?
কারণ, আমার মনে হয়নি। তাছাড়া এটা তো আমার দ্বিতীয় ছবি। আমি তো খুব একটা অ্যাপ্রোচ করি না। আমি তো পেশায় এডিটর। ফলত যে সময় আমার মনে হয়, একটা ছবি করা যেতে পারে তখনই ছবি করি।
আপনার প্রথম ছবি তো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। লোকের মুখের কথায় ছবিটা ছড়িয়ে গিয়েছিল...
সিনেমা হলে নয়। সেটা ইন্টারনেটে হয়েছিল। হলে ওই এক সপ্তাহ মতো ছিল। এবারের ছবিটাও যদি একই হয়, তাহলে ভাবতে হবে।
একটা সময় যেমন সবাই কবিতা লিখত, এখন তো সবাই ছবি তৈরি করে। এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
খুবই ভালো। দু’হাজার জন কবিতা লিখেছে বলে তো দু’জন উঠে এসেছে। তেমন অনেকে ছবি করলে তো কেউ উঠে আসবে। অনেকে এটা নিয়ে আপত্তি করে। আমার মতে এটাই ভালো। আগে সেলুলয়েডে ছবি করতে অনেক সমস্যা ছিল। এখন তো ক্যামেরা আর কম্পিউটার থাকলেই হল। আমার মনে হয়, কম লোকে কাজ করলে মধ্যমেধা চলে আসে। অনেক লোক কাজ করলে, কেউ না কেউ ঠিক উঠে আসবে। এখন একটা ঢাকা পড়ে যাওয়ার সমস্যা আছে। তবুও ইন্টারনেটের যুগে কিছু ঢাকা পড়ে যাওয়া মুশকিল। এখানে এখনও কন্টেন্টের কদর আছে। এটা নতুনদের বুঝতে হবে। নিরন্তর লড়াই করে যেতে হবে।
প্রথম ছবির পরে কি স্ট্রাগল খানিকটা কমেছে?
এক একটা ছবিতে এক এক রকমের স্ট্রাগল। এখন প্রযোজকরা আমার নামের সঙ্গে পরিচিত। আমাকে ডেকেছেন। মোটামুটি নাম করা লোকেরাই এখন ডাকছেন।
তাহলে আটকাচ্ছে কোথায়?
আমি কম ছবি করতে চাই। একটা ছবি নিয়ে ভাবতেই অনেকটা সময় লাগে। অত গাদাগাদা ছবি তৈরি করলে কোনও গুণমান থাকে না। আপনি যে কাজই করুন তার তো কোয়ালিটি থাকতে হবে। প্রত্যেকদিন একটা চিত্রনাট্য লিখতে বসলে একঘেয়ে কাজ হবে। মন দিয়ে কাজ করতে গেলে সময় লাগে। প্রি প্রোডাকশন, পোস্ট প্রোডাকশন মন দিয়ে করতে হবে।
এখনকার বাংলা ছবি দেখেন?
শেষ দেখেছি ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ আর ‘সহজ পাঠের গপ্পো’। ইন্দ্রাশিসের ছবি ‘পিউপা’ আর ‘বিলু রাক্ষস’ দেখব।
এখন তো প্রচুর ফেস্টিভ্যাল। আপনি সেখানে ছবি পাঠান?
পাঠাই না তা নয়। ফেস্টিভ্যালের ছবি এখন সিনেমা হলে দেওয়ার মতো। সেই ছবিও খুব টার্গেটেড হয়ে গিয়েছে। এরকম ছবি করলে তবেই যাবে। সিনেমাটা তো আমি ওভাবে করি না। মন দিয়ে কাজ করি। লোকে দেখবে ওটা চাই। কিন্তু নিজেদের মতো করে করব। ফেস্টিভ্যালেরও কিউরেটর থাকে। মনোনীত হলে ভালো লাগে। এখনও অতটা জোর দিইনি। শর্ট ফিল্মগুলো আগে দিতাম। এখন সেটার জন্যও আলাদা পরিশ্রম করতে হয়।
এই ছবি তৈরি করতে এত সময় নিলেন কেন?
টাকার সমস্যা। কখনও আবহাওয়ার জন্য পিছিয়েছি। চিত্রনাট্য লিখতে সময় লেগেছিল। শ্যুট করতে ১৮ দিন মতো লেগেছিল। শ্যুট শেষ করার পর মুক্তি পেতে অনেকটা সময় লাগল। গত বছর ডিসেম্বরে ছবিটা সেন্সর সার্টিফিকেট পেয়েছিল।
ছবির বিষয়বস্তু যে শ্রীকান্ত হবে সেটা কখন ঠিক করলেন?
রূপকলা কেন্দ্র থেকে পাশ করার পরে আমি যখন ভাবছি কী নিয়ে ছবি করা যায়, সেই সময় থেকেই শ্রীকান্ত মাথায় ছিল। বছর বারো আগেই একটা পিরিয়ড ফিল্ম করার ইচ্ছে ছিল। লিখতে বসে দেখলাম, বাজেট বড্ড বেড়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে শ্রীকান্ত চরিত্রটাকে আমি ইন্টারপ্রেট করতে চেয়েছিলাম। তার জন্য এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমার মতো করে শ্রীকান্ত করলাম।
ছবির তালিকায় আর কী কী আছে?
২১-২২টা বিষয় ভাবা আছে। তার মধ্যে ৩-৪টে হয়েছে। শ্রীকান্ত ছিল। সেগুলোর পাশে আবার কোনটা টেলিফিল্ম, ওয়েব আর কোনটা সেলুলয়েড, সেটাও লেখা আছে। মজার কথা কী জানেন, আমার প্রথম ছবি ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ এই তালিকায় ছিল ১৩ নম্বরে। আসলে র্যাঙ্কিং মেনে ছবি করা মুশকিল।
‘বাকিটা ব্যক্তিগত’তে একটা ম্যাজিক রিয়েলিজম ছিল। আর সেরকম কিছু আছে? ওই তালিকার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।
(হাসি) আছে, আরও নানা রকমের বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা আছে। আমি যদি ওগুলোই করি আর নতুন কিছু ভাবতে হবে না। এই রিলিজটা হয়ে যাওয়ার পরে ঋত্বিককে নিয়ে একটা ৮-৯ মিনিটের শর্ট ফিল্ম করেছি। পুরোটাই ভিএফএক্সে। ওটার এডিট নিয়ে বসব।
আপনার ছবি মানেই ঋত্বিক চক্রবর্তী, অপরাজিতা ঘোষ দাস।
আমি যদি বছরে দুটো-চারটে করে ছবি করতাম, তাহলে এসব ভাবতাম। আমরা একসঙ্গে একটা টিমের মতো কাজ করি। একসঙ্গে কাজ করাটা খুব আনন্দদায়ক।
ছবির গানগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় তো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কোথায় শ্যুট করেছিলেন?
পুরুলিয়াতে সোমকুপি বলে একটা জায়গা। আর একটা সুন্দরবনের কাছে গঙ্গাসাগরের দিকে মৌসুনিতে। এছাড়া রাজারহাটের আশেপাশে। গান লিখেছে আমাদের রূপকলা কেন্দ্রের জুনিয়র অনির্বাণ দাস, তন্ময় দাস। দুটো সেমি ক্লাসিক্যাল, লোকগীতি, দ্বিজেন্দ্রগীতি আছে। গান গেয়েছেন তিমির বিশ্বাস, কানাই দাস বাউল, সোহিনী চক্রবর্তী এবং বাবলু সাঁই।